এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট,১১ ফেব্রুয়ারী : মঙ্গলকোটে দুই বিজেপি নেতার বাড়িতে বোমাবাজির অভিযোগ উঠল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে । বুধবার গভীর রাতে মঙ্গলকোট থানার বকুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রহ্লাদ ধীবর ও অভিজিৎ হাজরা নামে ওই দুই বিজেপি নেতার বাড়িতে তৃনমুলের দলবল চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ । যদিও এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর না থাকলেও বোমা বিস্ফোরণের জেরে বাড়ির অ্যাসবেস্টসের চালসহ বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় মঙ্গলকোট থানার পুলিশ । যদিও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এনিয়ে থানায় নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ । ঘটনা ঘিরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায় ।
জানা গেছে,মঙ্গলকোট ব্লকের মাঝিগ্রাম অঞ্চলের বকুলিয়া গ্রামের আক্রান্ত দুই বিজেপি নেতার মধ্যে প্রহ্লাদ ধীবর মঙ্গলকোট ব্লক যুব মোর্চার সহ সভাপতি । অভিজিৎ বিজেপির আইটি সেলের কর্মী । প্রহ্লাদ ধীবর জানিয়েছেন, ‘বুধবার রাত্রি প্রায় একটা পনেরো নাগাদ ৭-৮ জন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতি আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে পরপর দুটি বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়৷। সেই সময় বাড়ির বারান্দাতে শুয়ে ছিলেন আমার বৃদ্ধ বাবা-মা । তাঁরা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান । তবে বোমা বিস্ফোরণের জেরে বাড়ির অ্যাসবেস্টসের চালসহ বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয় । ওই দুষ্কৃতিরা বোমাবাজির পর হুমকি দিয়ে যায় বিজেপি না ছাড়লে আমায় প্রাণে মেরে ফেলা হবে । পরে ওরা অভিজিৎ হাজরার বাড়িতেও চড়াও হয়ে বোমাবাজি করে বলে জানতে পারি ।’
জানা গেছে, প্রহ্লাদ ধীবরের বাড়ি বকুলিয়া গ্রামের মনসাতলায় । তার থেকে কিছুটা দুরে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের কাছাকাছি বাড়ি বিজেপির আইটি সেলের কর্মী অভিজিতবাবুর । তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করেও দুটি বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ । ঘটনার সময় অভিজিৎবাবুর অসুস্থ মা সোনামুখীদেবী বাড়িতে একাই ছিলেন । বোমাবাজির জেরে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন । প্রতিবেশীরা এসে তাঁর শুশ্রুষা করেন ।
মাস আটেক আগে মঙ্গলকোট ব্লকের মাঝিগ্রাম পঞ্চায়েতের বকুলিয়া গ্রামে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । এক তৃণমূল কর্মী আহত হন । এনিয়ে মামলাও হয় । তারপর থেকে বকুলিয়া গ্রামের বিজেপি সমর্থক ১৬ টি পরিবারের ৬৪ জন ঘরছাড়া ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিজেপির মঙ্গলকোট ৫০ নম্বর জেডপি মন্ডলের সভাপতি আশিষ মিশ্র ।
আশিষবাবুর অভিযোগ, ‘সম্প্রতি কয়েকজন ঘরছাড়া বাড়ি ফিরেছিলেন । তারপর থেকেই তৃণমূলের হার্মাদবাহিনী তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিল । গত সোমবার সকালে তৃণমূল আশ্রিত ১৫-২০ জন দুষ্কৃতি মহাদেব মাঝি,সঞ্জিত সর্দার ও গৌরব মাঝি নামে আমাদের দলের তিন কর্মীকে ব্যাপক মারধর করে । তার মধ্যে মহাদেব গুরুতর জখম হন । তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় । ঘটনার পর আহতরা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তৃণমূলের লোকজন রাস্তাতে আটকে তাঁদের হুমকি দেখায় । ফলে অভিযোগ দায়ের না করেই তাঁদের ফিরে আসতে হয় । এরপর ওইদিন রাতে অভিজিৎ হাজরার বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয়ে হুমকি দেখিয়ে আসে । কারন তৃণমূলের ধারনা অভিজিৎ হাজরা ও প্রহ্লাদ ধীবরের নেতৃত্ব গুণেই বকুলিয়া গ্রামবাসী বিজেপির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে । তাই গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতেই অভিজিৎ ও প্রহ্লাদের বাড়িতে বোমাবাজি করেছে তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী ।’ আশিষবাবু জানিয়েছেন,এনিয়ে তাঁরা থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন । পুলিশ অভিযোগ না নিলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি ।
অন্যদিকে মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওসব বিজেপির নাটক । ওরাই নিগনে আমাদের কর্মীকে খুন করলো । এখন সেই অপরাধ ঢাকা দেওয়ার জন্য নিজেরাই বোমাবাজি করে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।কাউকে মারার হলে আগেই আমাদের কর্মীরা ওদের মারতে পারতো।”।