এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,০৫ সেপ্টেম্বর : বর্ধমান শহরের বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের এক সাংবাদিকের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের “গুন্ডাবাহিনী”র বিরুদ্ধে ।শেখ ইনতাজ নামে ওই সাংবাদিক নিজের “এস এস টিভি পাবলিক” নামে ফেসবুক চ্যানেলে এই খবর জানিয়ে একটা ভিডিও পোস্ট করেছেন । ভিডিওতে তিনি তার ভাঙ্গা বাড়ির দেখিয়ে ক্ষোভে ভেঙে পড়েন । কখনো তাকে কাঁদতেও দেখা গেছে । যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস । তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন,’ঘটনাটি ঘটেছে সরাইটিকরে৷ এলাকাটা আমার বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত নয়৷ বর্ধমান উত্তর বিধানসভার এলাকার মধ্যে পড়ে ।’ তিনি জানান যে তাকে এবং তার দলকে বদনাম করার জন্য সাংবাদিকদের কাজে লাগাচ্ছে কেউ কেউ । যদিও ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক স্পষ্ট ভাষায় জানান যে তার বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস ও বর্ধমান ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী কাকলির গুপ্ত তার ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটেছে । আক্রান্ত সাংবাদিকের থানায় দায়ের করা অভিযোগপত্রটি শেয়ার করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷
ভিডিওতে ওই সাংবাদিককে কখনো উত্তেজিত হতে কখনো কেঁদে ফেলতে দেখা যায় । তিনি বলেন, গুন্ডারাজ কায়েম করেছেন আপনারা । একটা সাংবাদিকের বাড়িতে যদি হামলা হয়, আমাকে পেলে মেরে দিত । সঠিকভাবে খবর করি সেটাই আমার অন্যায় । তিলে তিলে বাড়িটা তৈরি করেছি আমরা ।’ এই কথা বলার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন৷
ফের তিনি বলেন,’আমার এই বাড়িটা ভেঙেছে । বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের বিরুদ্ধে আমার চ্যানেলে খবর হয়। সত্য খবরটা আমি তুলে ধরি, এটাই হয়তো আমার অপরাধ ।’ এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে ভাঙ্গা বাড়ি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখতে পাচ্ছেন ? আরো একবার আপনাদের দেখাচ্ছি । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যদি দেখতে পান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি দেখতে পান একবার দেখুন, গুন্ডারাজ চলছে বর্ধমানের বুকে । আপনাদের শাসকদলের নেতারা, তৃণমূলের নেতারা কি অত্যাচার করছে । একজন সাংবাদিকের বাড়ি যদি ভাঙচুর হয় , আজ আমাকে পেলে হয়তো মেরে দিত । কোথায় মমতা ব্যানার্জির গণতন্ত্র ? কোথায় শাসন ? গুন্ডারাজ পুষে দেখেছেন আপনারা ।’
সাংবাদিক বলেছেন,’সিপিএমের অত্যাচার দেখেছি । কিন্তু আপনাদের অত্যাচার তার থেকে ভয়ানক । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি খবরটা দেখে থাকেন, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস যদি খবরটা দেখে থাকেন, একবার দেখুন । বর্ধমান এক নম্বর ব্লকের ব্লক সভানেত্রী কাকলি গুপ্ত তা, আপনিও দেখুন কি গুন্ডারাজ করছেন আপনারা ।’
বিধ্বস্ত অবস্থায় সাংবাদিক বলেন,’আমি মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জিকে বলছি কি শাসনব্যবস্থা আপনাদের ? আপনি মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ মন্ত্রী, আর আপনার আমলে আপনার দলের পোষা গুন্ডারা আমার বাড়ি ভাঙচুর করেছে । আশা করি মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন, সেনাপতি অভিষেক ব্যানার্জি দেখছেন,একবার দেখুন ।’ এরপর তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন না বদলা নয় বদল চাই । কিসের বদলা নিচ্ছেন আমার উপর ? বারবার বলছি বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়কের বিরুদ্ধে আমার চ্যানেলে খবর হয় । কাকলির গুপ্ত তা, বর্ধমান ১ নম্বর ব্লকের সভা নেত্রী, তার বিরুদ্ধে আমার চ্যানেলে খবর হয় । এই দুজনার মদতেই আজ আমার বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।’ সাংবাদিকের বক্তব্য শুনুন 👇
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ এখন শাসক দল তৃণমূলের বদান্যতায় দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।এখানে ভয়ের, ভীতির, ত্রাসের পরিবেশ বিরাজ করে। কেউ শাসকের বিরুদ্ধে সরব হলেই ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, ভাষা, পেশা নির্বিশেষে তার উপর আক্রমণ হচ্ছে।সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন ছোটো ছোটো ডিজিটাল নিউজ পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকরা যাঁরা শাসকের অপকর্ম, দুর্নীতির খবর রাজ্যের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আর এতেই তাঁরা শাসকের রোষানলে পড়ছেন। কখনো আইনি নোটিশ, মিথ্যা মামলা, বা কখনো সরাসরি আক্রমণ বা হিংসাত্মক হামলার শিকার হচ্ছেন।’
এরপর তিনি লিখেছেন,’এবার শাসকদলের দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়লেন সেখ ইমতেয়াজ। তিনি বর্ধমান ডিজিটাল নিউজ নামক একটি পোর্টালের সাংবাদিক। কদিন আগে তিনি বর্ধমান জেলায় শাসকদলের আভ্যন্তরীন কলহ ও দুর্নীতি নিয়ে একটি খবর করেন যেখানে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য নয়ন, বর্ধমান ডিজিটাল নিউজ চ্যানেলে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এবং কিছু মন্তব্য করেন, যে কারণে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। এর ফল স্বরূপ সেখ ইমতেয়াজের খাগড়াগড় এর বাড়িতে গতকাল রাত্রে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বিধায়ক খোকন দাসের নির্দেশে হামলা চালায়, এবং তাঁর ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে তচনছ করে দেওয়া হয়, এবং যথেচ্ছ লুটপাট চালানো হয়।’
তিনি লিখেছেন,’ঐ সময় সেখ ইমতেয়াজ তার পরিবার সহ বর্ধমানের অন্যত্র ছিলেন তাই তিনি এই আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে যান। নিজের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা জানতে পেরে সেখ ইমতেয়াজ তার পরিবারের লোকেদের সাথে নিয়ে খাগড়াগড়ে গেলে সেখানে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যপক মারধর করে, সেখ ইমতেয়াজকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। অন্যান্য সাংবাদিকরা ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গেলে তাদের ও মারধর করা হয়, তাদের মোবাইল ভেঙ্গে দেওয়া হয়।’
সবশেষে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন,’বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস ২০২১ সালের নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় একজন প্রধান অভিযুক্ত। তাকে বহুবার সিবিআই দুর্গাপুরের সিবিআই ক্যাম্পে তলব করেছে। এই সন্ত্রাসের শিরোমণি বিধায়কের গারদের পেছনে স্থান হওয়া উচিৎ ছিল, আর তা হলেই বর্ধমানের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারতেন, এই রকম উৎপাত দেখতে হতো না। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমি সাংবাদিক সেখ ইমতেয়াজ ও তার পরিবারের পাশে আছি ও যা সহযোগিতা প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’।