এইদিন ওয়েবডেস্ক,দিনহাটা,২৭ মার্চ : কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপি কর্মী খুনের মামলায় আদালতের হেফাজতে থাকা নথিপত্রের বাক্সে জল ঢুকিয়ে নথি ও খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্র নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ তুললেন সিবিআইয়ের আইনজীবী কৌশিক ভদ্র । তিনি বলেন, নথি সাক্ষীদের বয়ান ও সেই ঘটনার সময়কার উদ্ধার হওয়া যাবতীয় অস্ত্র যে ট্রাঙ্কে করে জিআর কোর্টের মালখানায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল সেই ট্রাঙ্ক গতকাল বিচারপতির উপস্থিতিতে কোর্টরুমে খোলা হলে, দেখা যায় জল ঢুকে সমস্ত নথি এবং আলামত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি আরো বলেন কালকের এই ঘটনার পর তিনি কোর্টের কাছে জানতে চেয়েছেন এই ঘটনা কি করে হয়, যেখানে একটি বিচারাধীন গুরুত্বপূর্ণ মামলার নতি সংরক্ষিত থাকে সেই বাক্সে জল ঢোকে কিভাবে? আর তার সেই জিজ্ঞাসার পর বিচারপতি এই ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন । মামলায় পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ হয়েছে আগামী ২ ও ৩ জুন।
প্রসঙ্গত,২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ব্যাপক রাজনৈতিক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে কোচবিহারের দিনহাটায় । ২০২১ সালের ৪ মে দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের পেটলার জামাদর বস এলাকার বিজেপি কর্মী হারাধন রায়কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । এই ঘটনায় ৮ জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে বিজেপি । পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই । সেই ঘটনার তদন্তে নেমে সিবিআই-এর আধিকারিকরা ৭ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতারে । পুলিশ ওই খুনের ঘটনার দু’দিন পর অর্থাৎ ৬ তারিখে প্রথম গ্রেফতার করে জিয়ারুল মিঁঞা নামে এক তৃণমূল কর্মী । কিন্তু পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পর সিবিআই ফের তাকে গ্রেফতার করে ।
সিবিআইয়ের আইনজীবী কৌশিক ভদ্র বলেন,’খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই । সিজার লিস্টে সাক্ষীদের সই সাবুদও ছিল । চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় কোর্টে সেটা জমা দেওয়া হয় । ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জমা দেওয়া হয় ওই সমস্ত আলামত । বর্তমানে ট্রায়াল চলছে । ওই সমস্ত আলামত একটি ট্রাংকের মধ্যে ছিল । আদালতের নির্দেশে যখন ট্রাংকের খোলা হয় তখন দেখা যায় তার মধ্যে জলে ভর্তি । সমস্ত নথিপত্র নষ্ট হয়ে গেছে । আদালতে প্রমাণের ক্ষেত্রে যেগুলো আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল । সেই সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র যেগুলো ছিল সেগুলো জং করে নষ্ট হয়ে গেছে ।’ তিনি বলেন,’এই পরিস্থিতিতে আমি আদালতের নজর আনি বিষয়টি । আমি একটা লিখিত আবেদন করেছি যে এই ঘটনার পিছনে কারা যুক্ত আছে সেটা খুঁজে বের করা হোক । রাজ্য পুলিশের জিআর কোর্টে ওই সমস্ত নথিপত্রগুলো ছিল । সেই মালখানাতে কিভাবে ওই ট্রাংকের ভিতরে জল ঢুকলো নাকি এর পেছনে কোন অন্য উদ্দেশ্য আছে সেটা তদন্তের জন্য আমি আদালতের কাজে আবেদন জানাই । আদালত এই বিষয়ে কোচবিহারের এসপিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ।’ তিনি বলেন,’কর্তব্যের গাফেলাতি তো আছেই । ওটাতো আমাদের হাতে নেই৷ সিবিআই এর হাতে যেগুলো ছিল সেগুলো তো ২০২২ সালেই জমা করে দিয়েছে । তার রিসিভ কপি সিবিআইয়ের কাছে আছে ।’
অন্যদিকে এই ঘটনায় আসামী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল জলিল আহমেদ এবং বিবেক দত্ত উভয়েই দাবি করেছেন, সিবিআই সময় মত সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারছে না তার জন্যই মামলা দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।।

