এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোলাঘাট,২১ মে : কোলাঘাটে শুভেন্দু অধিকারীর ভাড়া ঘরে আই প্যাককে সাথে নিয়ে পুলিশি অভিযানের অভিযোগ উঠল । অভিযোগ তুললেন খোদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শুভেন্দুর অভিযোগ,’কোলাঘাটে আমার একটা ভাড়া ঘর আছে । আমি যেহেতু বিরোধী দলনেতা গেস্ট হাউস চাইলেই পেতে পারি কিন্তু নিই না । সেই কারণে আমি একটা ছোট্ট ভাড়া করা গেস্ট হাউস নিয়ে রেখেছি । ওই ভাড়া ঘরের আমার যে কেয়ারটেকার ছেলে আছে সে আমায় ফোন করে বলল আইপ্যাক এর কিছু সাদা পোশাকের সদস্য এবং তমলুকের সিআই ও কোলাঘাটের ওসি কাউকে কিছু না বলে সোজা আপনার বেডরুমে ঢুকে গেছে । আমি তাকে অফিসার কে ফোন দেওয়ার জন্য বলি। কিন্তু অফিসার প্রথমে ফোন ধরতে চায়নি । পরে কোলাঘাটের ওসি সৌরভ জিনা ফোন ধরে । আমি তাকে বলি যে আমার পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । কারণ মহামান্য হাইকোর্টে আমি অনেক লড়াই করেছি । আমার বাড়ির সামনে অসভ্যতা করেছে। আমার বয়স্ক বাবা-মাকে, ভাইপোর নির্দেশে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করা হয়েছে এবং আমি যেহেতু মমতা ব্যানার্জিকে নন্দীগ্রামে হারিয়েছি সেই কারণে আমার উপর বহুবার আক্রমণ হয়েছে৷’
তিনি বলেন,’আমাকে হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা অনেকগুলি প্রটেকশনের মধ্যে একটা প্রটেকশন আমায় দিয়েছেন এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি মিস্টার মুখার্জি অঙ্গীকার করেছিলেন যে শুভেন্দু অধিকারীর কোন আবাসস্থল তল্লাশি করতে গেলে হাইকোর্টের অনুমোদন নিয়ে করবে । তাই সার্চ ওয়ারেন্ট,ভিডিওগ্রাফি এবং মিডিয়া ছাড়া বা আমার উপস্থিতি বা আমার অনুমোদিত লোকের উপস্থিতি ছাড়া সার্চ করতে পারেন না । আপনি যদি দুটো ভাঙ্গা বন্দুক রেখে দেন, আপনি যদি কিছু টাকা সেখানে রেখে দেন, আপনি যদি জাল নোট, হেরোইন অথবা যদি কিছু বেআইনি জিনিস রেখে দেন তার দায়িত্ব কে নেবে? আপনারা আমাকে ফাঁসাতে পারেন না ।’
তিনি বলেন,’পরবর্তীকালে আমি আমার রাজনৈতিক সহকর্মীর যারা আছেন তাদের আমি সেখানে পাঠাই এবং পুলিশকে বলতে বলি আমার অনুপস্থিতিতে যেন সার্চ না করে । হাইকোর্টের যদি অনুমোদন থাকে তাহলে ভিডিওগ্রাফি করে তল্লাশির আমি অনুমোদন করব । তারপরেও ওরা ওখানে এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে যথেষ্ট অসভ্যতামি করেছে । আর এর নেতৃত্ব দিয়েছে তমলুকের সিআই চম্পক রঞ্জন চৌধুরী । এছাড়া যিনি নন্দীগ্রামে গণহত্যার সময় ছিলেন, এখানকার বর্তমান ওসি সৌরভ জিনা।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’আমাদের লোকেরা পরে যখন সেখানে যায় তারা আমাকে বলছেন আই প্যাক এর লোকজন সাথে ছিল । তারা ছোট হাতি গাড়িতে করে বস্তায় ভরে হয় অস্ত্র, নয় ড্রাগ, নয় টাকা নিয়ে গিয়েছিল । আমি অবাক কোন রাজ্যে বসবাস করছি! আপনি নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেবেন না, হাইকোর্টে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পালন করবেন না,ভিডিওগ্রাফি করবেন না, মিডিয়াকে ডাকবেন না, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান,হাইকোর্টে আমার প্রটেকশন আছে, মুখ্যমন্ত্রীর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কিন্তু হাইকোর্টে ফিরিয়ে দিয়েছে, স্টে অর্ডার দেয়নি । তারপরেও আপনি এই জিনিস করবেন?’
তিনি বলেন,’আমি কোলাঘাট থানায় এসেছিলাম । কিন্তু কাপুরুষ ওসি আর সিআই দুজনেই নেই । এ কারণে আমার একটা প্রোগ্রাম নষ্ট করতে হয়েছে। ঘাটালে আমি জনসভায় যেতে পারি নাই, দশ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল ।’ তাদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নেন শুভেন্দু অধিকারী ।
এরপর তিনি বলেন,’কোথায় নিয়ে গেছে এরা? নির্বাচন কমিশন কেন কোলাঘাটের ওসি আর তমলুকের সি আইকে সাসপেন্ড করবে না ? আমি নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ করছি এবং সিসিভিটি টিভি ফুটেজে দিচ্ছি । সিআই আর ওসিকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করতে হবে। যদি এসপি জড়িত থাকে তাকেও সাসপেন্ড করতে হবে । এর পিছনে কে আছে আমি জানতে চাই?’ বুধবার এনিয়ে হাইকোর্টে একটা পিটিশন দাখিল করার কথা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন,’আমি আইনি পথে লড়বো ।
গোটা বাংলার জনগণকে আমি বলছি কোন রাজাত্বে আছেন দেখুন। যখন ভাইপো বা ওদের কাউকে ডেকেছে, সিবিআই ওদের নোটিশ করে ডেকেছে । কোন রাজত্বে আমরা আছি? পশ্চিমবাংলার জনগণ দেখুন । আমি মমতা পুলিশের কাছে কৃতার্থ যে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করা মানে জঙ্গলমহল বা অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রত্যেক ভোটারকে আক্রমণ করা । এর জবাব ২৫ তারিখ আর ১ তারিখে আপনারা দেবেন । আর যে বিপুল সংখ্যক দলীয় কর্মীরা এসেছেন তাদের বলব ভোটের কাজে চলে যান । ওরা চায় আমাদের প্রচার নষ্ট করতে ।’
সবশেষে তিনি বলেন,’আমি আইনি পথের মোকাবেলা করে নেব । আমি রাতের মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ পাঠাচ্ছি । নির্বাচন কমিশনকে বলবো যে যে পুলিশ গিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের ব্যবস্থা নিতে হবে । এর শেষ থেকে আমি ছাড়বো । চোরর মমতাকে বলে গেলাম আপনাকে হারিয়েছি, আপনাকে প্রাক্তন করব । আপনার ভাইপোকে কোমরের দড়ি পড়িয়ে টানতে টানতে জেলে নিয়ে যাব এবং কেষ্ট মন্ডলের সঙ্গে থাকবে আপনার ভাইপো ।’
শুভেন্দু অধিকারী জানান যে পুলিশের তল্লাশি অভিযানের জন্য ঘাটালে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে তিনি জনসভায় যোগ দিতে পারেননি, যেখানে তার বক্তব্য শুনতে ১০,০০০ লোক জড়ো হয়েছিল। তিনি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন । শুভেন্দু অধিকারীর সাংবাদিক সম্মেলনের পর বিজেপি কর্মীরা কোলাঘাট থানার সামনে ‘ছিঃ, মমতা ওয়াক থুঃ’,’মমতা ব্যানার্জি হায় হায়’, ‘পিসি চোর ভাইপো চোর তৃণমূলের সবাই চোর’ প্রভৃতি স্লোগান তুলে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় ।।

