জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১২ জুন : অবশেষে মানুষের ভরসাস্থল পোস্ট অফিসে টাকা রেখে প্রতারণার শিকার হলো শতাধিক গ্রাহক। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার অন্তর্গত দাওড়াডাঙা পোস্ট অফিসের । জানা যাচ্ছে নিজেদের সুবিধার্থে দাউড়ডাঙা পোস্ট অফিসে বেশ কিছু গ্রাহক নিজ নিজ নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন । তারা নিয়মিত লেনদেন করত। পোস্ট মাস্টার টাকা জমা নিত এবং পোস্ট অফিসের স্ট্যাম্প সহ পাস বই আপডেট করেও দিত। কোনো সমস্যা ছিলনা। কিন্তু জনৈক গ্রাহক টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন তার পাস বইয়ে টাকা জমা থাকলেও পোস্ট অফিসের খাতায় কোনো টাকা জমা পড়েনি। তিনি বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। বিষয়টি সামনে আসতেই অন্যান্য গ্রাহকরা পোস্ট অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকে। এমনকি টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে তদ্বির করেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ ।
জানা গেছ,গ্রাহকদের ক্ষোভের কথা ডাক বিভাগের উপরমহলে পৌঁছালে জনৈক ইন্সপেক্টর ঘটনাস্থলে আসেন এবং সুপারভাইজারের সহযোগিতায় প্রতারিত গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো ডকুমেন্ট না দিয়ে পাসবইগুলি সংগ্রহ করেন। তিনি জমা অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে প্রতারিত গ্রাহকদের আশ্বাস দেন। যদিও বছর দশেক পার হতে গেলেও এখনো কোনো গ্রাহক তাদের জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাননি বলে অভিযোগ । তাদের আশঙ্কা হয়তো ডাক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একাংশ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য এতবড় প্রতারণার ঘটনা ঘটে গেছে।
প্রতারিত গ্রাহক সন্তোষ কুমার ঘোষের কাছে পোস্ট মাস্টারের স্বাক্ষরযুক্ত যে ডকুমেন্ট আছে তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সালের ১৮ ই এপ্রিল পর্যন্ত তার পাসবইয়ে পঁচাশি হাজারের সামান্য বেশি টাকা জমা আছে। অথচ তিনি এখনো পর্যন্ত কোনো অর্থ ফেরত পাননি।
সন্তোষ বাবু বললেন,’আমরা সাধারণ মানুষ। নিরাপদ মনে করে পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখি। অফিসে নিজের চেয়ারে বসে পোস্ট মাস্টার টাকা জমা নিয়েছেন এবং অফিসের স্ট্যাম্প দিয়ে পাসবই ফেরত দিয়েছেন। ভিতরে কি ঘটনা ঘটছে সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়। কিন্তু সেখানেও যে প্রতারণার ঘটনা ঘটবে সেটা বুঝতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন,’ টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যে অফিসার আমাদের কাছ থেকে পাসবই সংগ্রহ করলেন তিনি তো আরও বড় প্রতারণা করলেন। আমার কাছে টাকা জমা দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য থাকলেও সবার কাছে সেটা হয়তো নাই। পাসবই শেষ ভরসা হলেও সেটাও প্রকাশ্য দিবালোকে হাতিয়ে নেওয়া হলো । ডাক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি অবিলম্বে সুদসহ আমাদের কষ্ট করে জমা অর্থ ফেরত দেওয়া হোক। না হলে আমাদের হয়তো আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে ।’
প্রসেনজিৎবাবু নামে পোস্ট অফিসের যে আধিকারিকের কাছ থেকে গ্রাহকরা পাসবইগুলি সংগ্রহ করেছিলেন তাঁকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি । এমনকি টেক্সট মেসেজেরও কোনো জবাবও দেননি তিনি । ফলে অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানা সম্ভব হয়নি । উল্লেখ্য,দাওড়াডাঙা পোস্ট অফিসের নিজস্ব কোনো ঘর নেই । একটি মাটির ঘরে পোস্ট অফিসের কাজকর্ম চলত । কিন্তু সেই ঘরটি সম্প্রতি ভেঙে যাওয়ার পর গ্রামের ধর্মরাজ তলায় বসে প্রয়োজনীয় সরকারি কাজ সারেন পোস্ট অফিসের কর্মীরা ।।