এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ ডিসেম্বর : মুসলিম প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে হিন্দু প্রেমিকের মায়ের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মেয়েটির পরিবার পরিজনের বিরুদ্ধে । পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার থানার শ্যামসুন্দরপুর এলাকার ঘটনা । শ্যামসুন্দরপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর ভুঁইঞার মা’কে তার প্রেমিকা ফিরোজা খাতুনের বাড়ির লোকজন বিবস্ত্র করে মারধর ও মুদিখানা দোকানে লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ । বলা হচ্ছে যে আক্রান্ত মহিলা শঙ্করী ভূঞ্যা স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী । এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে । যদিও শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এনিয়ে নন্দকুমার থানার ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্ত মহিলা । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগপত্রের ছবি পোস্ট করে তৃণমূল কংগ্রেসের হিন্দু কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন,’জিহাদি হামলায় আক্রান্ত তৃণমূলের স্থানীয় হিন্দু নেত্রী । পুলিশ কোনো রকম সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি । পরিত্রাতা বিজেপি ৷ আক্রান্ত পরিবারের পাশে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা সক্রিয় ভাবে রয়েছেন। তৃণমূলের হিন্দু সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলব আপনাদেরও এখন ভাবার সময় এসেছে নয়তো এর পর হয়তো আপনার পালা৷’
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’তৃণমূলের স্থানীয় হিন্দু নেত্রী জিহাদীদের দ্বারা আক্রান্ত, পরিত্রাতা বিজেপি;পশ্চিমবঙ্গ সম্পূর্ণ রসাতলে যেতে আর বেশী দেরি নেই। এখনই যদি রাজ্যবাসী জেগে না ওঠেন তাহলে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে সবার জন্য। আপনারা সন্দেশখালি দেখেছেন, মিনাখাঁ দেখেছেন এবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার শ্যামসুন্দরপুরেও সেই একই ঘটনা। একটি পরিবারের উপর দলগত ভাবে জিহাদীরা আক্রমণ চালিয়ে একজন স্থানীয় তৃণমূল মহিলা নেত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধর করলো, লুঠপাট করলো। উদ্বেগের বিষয় হল থানায় অভিযোগ করার পরেও পুলিশ কোনো রকম সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কারণ এই দুষ্কৃতীরা মমতা ব্যানার্জীর ভোটব্যাঙ্ক, এবং রাজনৈতিক ভাবে ওনার দ্বারাই লালিত পালিত। মমতা ব্যানার্জীর রাজত্বে এরা আইন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, প্রশাসনের কিছুই করার নেই। তা সে আক্রান্ত ব্যক্তি তৃণমূল দলেরই হিন্দু নেতা নেত্রী হোন না কেন। কারণ আক্রান্ত হিন্দু ও আক্রমণকারী জিহাদী হলে পুলিশ প্রশাসনের পাল্লা কোন দিকে ভারী হবে তা তো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।’
তিনি আরও লিখেছেন,’আক্রান্ত পরিবারের পাশে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা সক্রিয় ভাবে রয়েছেন। তৃণমূলের হিন্দু সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলব আপনাদেরও এখন ভাবার সময় এসেছে নয়তো এর পর হয়তো আপনার পালা। এই অরাজকতার থেকে পরিত্রাণ একমাত্র বিজেপি দিতে পারে, অন্য কেউ নয়।’
শঙ্করী ভূঞ্যার পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্র অনুয়ায়ী তিনি বলেছেন,’আমার কনিষ্ঠ পুত্র শুভঙ্কর ভূ্যা বয়স ২৩ বৎসর এর সহিত আমাদের স্বগ্রাম নিবাসী আব্দুল মজিদ মালিদার কন্যা ফিরোজা খাতুন বয়স ১৯ বৎসর দীর্ঘদিন যাবৎ ভাবভালোবাসার সুবাদে গত ইং- ১৯/১১/২০২৪ তারিখ দুইজন বিবাহ করিয়া বাড়ী হইতে অন্যত্র কোথাও চলিয়া যায়। তাহার পর হইতে অদ্যাবধি আমার পুত্র বাড়ী ফিরে নাই।উক্ত বিষয় কে কেন্দ্র করিয়া ফিরোজা খাতুনের বাড়ীর লোক আমাদের গৃহে চড়াও হইয়া মারধর সহ প্রান নাশের হুমকি দেয়। উক্ত বিষয়ে আমি আপনার থানায় লিখিত আকারে জানাইয়াছি।’
তিনি লিখেছেন,’উক্ত থানায় জানানোর বিষয় নিম্ন অভিযুক্ত ব্যাক্তিগন জানিতে পারিয়া অদ্য ইং- ২০/১২/২০২৪ তারিখ সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ নিম্ন অভিযুক্ত ব্যাক্তিগন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বে-আইনী জনতায় জোটবদ্ধ হইয়া হাতে বাঁশের ড্যাং লোহার শাবল, লোহার রড, কাঠারী, ছোরা ইত্যাদি অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমর ঘর সহ মুদিখানা দোকানে চড়াও হইয়া অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করিতে করিতে আমার গৃহের সামনে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা প্রথমে ভাঙচুর করে। অভিযুক্ত ব্যাক্তিগনের তান্ডব দেখিয়া এবং আমি একাকী ঘরে থাকায় আমি অভিযুক্ত ব্যাক্তিগনের ভয়ে ঘরে দরজা ও দোকানের লোহার সাটার বন্ধ করে দিই। উক্ত সময় অভিযুক্ত ব্যাক্তিগন প্রচন্ড ক্রোধান্বিত হইয়া আমার ঘরের কাঠের দরজা ও দোকানের লোহার সাটার অভিযুক্ত ব্যাক্তিগনেরা লোহার শাবল, লোহারে রড, বাঁশের ডাং, কাটারী ‘ইত্যাদি লইয়া ভাঙিয়া আমার গৃহে ঢুকিয়া আমাকে প্রচন্ড অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ দিয়ত সকলে মিলে আমাকে ঘিরে ধরে যে যাহার মতো কিল, চড়, লাথি ঘুষি মারে৷’ তিনি জানান যে তাকে বাঁশ ও কাটারি দিয়ে মাথা ও পায়ে মারা হয় । আজবাহার দিন নামে একজন তাকে বিবস্ত্র করে চুলের মুঠি ধরিয়া প্রকাশ্য রাস্তায় প্যারেড করায় ।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, নন্দকুমার থানার শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শঙ্করী ভূঞ্যার ছেলে শুভঙ্করের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ধাননগরের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ মালিদার মেয়ে ফিরোজা খাতুনের বছর চারেক ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল । কিন্তু ফিরোজার পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি । মাস ছয়েক আগে ফিরোজাকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু বিয়ের পরেও প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দিয়েছিলেন ফিরোজা । মাস খানেক আগে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান ওই তরুনী ৷ উভয় বাড়ির লোকজন বসে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়ব । কিন্তু দিন চারেক আগে ফের শুভঙ্কর ও ফিরোজা পালিয়ে গেছেন । বর্তমানে তাঁদের কোনও খোঁজ নেই।
আর এরপর শুক্রবার সকালে ফিরোজা খাতুনের বাড়ির লোকজন শুভঙ্করের বাড়িতে হামলা চালায় ।শুভঙ্করের মা শঙ্করী ভূঞ্যাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয় । পরে নন্দকুমার থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নন্দকুমার তেঁতুলবেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে । মাথায় গুরুতর আঘাতের কারনে চিকিৎসকরা তাকে তমলুক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেয় । কিন্তু পুলিশ গুরুতর আহত শঙ্করীদেবী ও তার ছেলেকে দীর্ঘক্ষণ থানায় বসিয়ে রাখে বলে অভিযোগ । পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগের অভিযোগ তুলেছেন আক্রান্ত মহিলার বড় ছেলে ।
এই ঘটনায় অভিযুক্তরা হল,ফিরোজার মা নুরানেশা বিবি,বাবা আব্দুল মজিদ মালিদা, মান্নান মালিদা, সইদুল মালিদা,মেহেরজান বিবি,টুনি বেগম,খাইরতি মালিদা,হাসিবুল দিন,আজবাহার দিন এবং বুল্টি মালিদা । অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার(বিএনএস) ১২৬(২),১১৫(২),১১৭(১২), ১১৮(২),১০৯,৩২৯(৪),৩২৪(৪),৭৬,৩০৩(২),৩৫১(২), ৭৯ এবং ৩(৫) ধারায় মামলা রজু করেছে পুলিশ ।।