এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ ফেব্রুয়ারী : গত ৫ জানুয়ারী তৃণমূলের ‘কুখ্যাত’ নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)র আধিকারিকদের । তারপর থেকেই বেপাত্তা শেখ শাহজাহান । দীর্ঘ ৫৬ দিন পর অবশেষে চাপে পড়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হলো । পুলিশের এই গ্রেফতারিকে নাটক বলে ‘কটাক্ষ’ করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ।
তিনি আজ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিখেছেন, ‘সবটাই নাটক… গ্রেফতারি না ছাই! জনরোষের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শেখ শাহজাহানকে সুরক্ষা দিলো রাজ্য পুলিশ… অবাক হবো না যদি দু’দিন বাদে এই শেখ শাহজাহানকেই উডবার্ন ওয়ার্ডে বহাল তবিয়তে, মিথ্যে অসুস্থতার অজুহাতে ভর্তি হতে দেখি…। সাধারণ মানুষের রোষের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শেখ শাহজাহানকে সুরক্ষা দিল রাজ্য পুলিশ।’
বুধবার রাতেই সন্দেশখালির বেড়মজুর থেকে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ । লঞ্চে করে আনা হয় ন্যাজাট থানায় নিয়ে আসা হয় । আজ বৃহস্পতিবার তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হবে । তার আগে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে চত্বরে । পাশাপাশি সন্দেশখালীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করে মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সন্দেশখালির বিতর্কিত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার দলবলের বিরুদ্ধে এলাকার মহিলাদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে । বিজেপি কর্মীসহ বেশ কিছু গ্রামবাসীকে খুনের অভিযোগ রয়েছে তার ও তার দলবলের ওপর । এছাড়া এলাকাবাসীর জমি জায়গার জোর করে দখল করে নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত শাহজাহান । শুধু তাই নয়,সরকারি অফিসের ঢুকে আধিকারিকদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে শাজাহান এর বিরুদ্ধে । তার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে ।
নিজের ‘রোহিঙ্গা বাহিনী’দের দিয়ে ইডির ওপর হামলার চালিয়ে শাহজাহান বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার এই সমস্ত কুকর্ম প্রকাশ্যে এসেছে । আর তারপর থেকেই ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে গোটা সন্দেশখালী । বিশেষ করে শাহজাহান ও তার ডান হাত শিবু হাজরার ফাঁসির সাজার দাবী তুলেছেন এলাকার মহিলারা । এদিকে শাজাহানকে গ্রেপ্তারির বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একরাশ প্রশ্ন উঠছিল । কলকাতা থেকে বুদ্ধিজীবীদের একটি দল সন্দেশখালি গিয়ে নির্যাতিত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার পর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিল । দিন দুয়েক আগে কলকাতা একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বুদ্ধিজীবীরা নজিরবিহীন ভাষায় শাহজাহানকে আড়াল করা তৃণমূল নেতাদের আক্রমণ করেন । জনৈক এক বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন,’সমবেতভাবে ধিক্কার জানান এই সমস্ত কুলাঙ্গারদের, হ্যাঁ আমি কুলাঙ্গারই বলছি, গ্রামের মহিলারা কুলাঙ্গার বলেছেন বরঞ্চ তারা আরো খারাপ ভাষা প্রয়োগ করেছেন । সেটা আর বলতে চাইছি না । ধিক্কার দিন । তারা যেন সমাজে আর সকলকে বুক ফুলিয়ে না চলতে পারে । তারা একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থক হতে পারে,হোক । আমাদের কিছু আসা যায় না। কিন্তু তারা যেন আর কখনো ওই মা-বোনদের উপর অত্যাচার আর করতে না পারে । এইটুকু নিশ্চয়তা অন্তত তাদের দিন । তাহলে আমাদের যাওয়াটা সার্থক হবে ।’
তিনি আরও বলেছিলেন,’আমার বলতে লজ্জা লাগছে, সত্যিই নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছা করছে, গ্রামের মহিলাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা সহ্য করা যায় না । অন্তত আমার বয়সে, আমার ঘরেও সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে, এইরকম ঘটনা কারোর সঙ্গে ঘটতে পারে এটা আমার কল্পনার বাইরে । আমরা যখন সন্দেশখালীর একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় ঢুকি তখন মনে হচ্ছিল যেন আমরা পশ্চিমবঙ্গে নেই, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোন একটা অঞ্চলে এসে উপস্থিত হয়েছি ।’
প্রসঙ্গত, তৃণমূল নেতা দাবি করেছিলেন যে আদালত তাদের হাত-পা বেঁধে দেওয়ার কারণে শাজাহানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না । যদিও কলকাতা হাইকোর্ট সব জানিয়ে দেয় যে পুলিশ যে কোন সময় শাহজানকে গ্রেফতার করতে পারে, আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই । কলকাতা হাইকোর্টেও জানাই যে ইতি বা সিবিআই চাইলে শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে । কিন্তু ইডি বা সিবিআইকে গ্রেফতারের সুযোগ না দিয়ে রাজ্য পুলিশই সন্দেশখালীর কুখ্যাত নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করলো ।।