প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ ডিসেম্বর : দাবি মত টাকা দিতে না পারায় সরকারী পাঠ্য পুস্তকবাহী এক ট্রাক চালককে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠলো পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে । মঙ্গলবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার মসাগ্রাম এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এই ঘটনাটি ঘটে । প্রহৃত ট্রাক চালক শেখ নজরুল এদিনই ঘটনা সবিস্তার লিখিত ভাবে জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও সভাধিপতিকে জানিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর শাস্তির দাবি করেছেন । অভিযোগ জমা পড়ার পরেই নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশের কর্তারা । ঘটনার জন্য এক পুলিশ কনস্টেবলকে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জামালপুর থানার পুলিশ কর্তাদের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে ।
প্রহৃত ট্রাক চালক শেখ নজরুল পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েছেন , তাঁর বাড়ি বর্ধমানের আঞ্জির বাগান এলাকায় । রাজ্য সরকার ফ্রিতে স্কুলের পড়ুয়াদের যে পাঠ্য পুস্তক দেয় সেই পাঠ্যপুস্তক তাঁর ট্রাকে লোড ছিল ।নির্দিষ্ট জায়গায় সেই বই পৌছে দেবার জন্য এদিন সকালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে তিনি ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ জাতীয় সড়কে ডিউটি রত জামালপুর থানার পুলিশ কর্মীরা তাঁর পথ আটকায় । পুলিশ কর্মীরা তাঁকে বলে ’নো-এন্ট্রি’ চলছে এখন ট্রাক নিয়ে যাওয়া যাবে না ।তারই মধ্যে ট্রাক নিয়েযেতে গেলে ৫০০ টাকা দিতে হবে বলে এক পুলিশ কর্মী তাঁকে জানিয়ে দেয়।শেখ নজরুল জানিয়েছেন,পড়ুয়াদের ফ্রিতে দেবার সরকারী পাঠ্যপুস্তক তাঁর ট্রাকে লোড রয়েছে জানিয়ে তিনি ৫০০ টাকা দিতে অস্বীকার করেন । অভিযোগ তা শুনেই রেগে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মদ্যপ অবস্থায় থাকা এক পুলিশ আধিকারিক লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তাঁকে আহত করে। এরপর তিনি জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে মারধরের ঘটনায় জড়িত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে জামালপুর থানায় অভিযোগ জানাতে যান । কিন্তু ওই সময় জামালপুর থানায় থাকা ডিউটি অফিসার তাঁর অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে তাঁকে ফিরিয়ে দেন ।
ট্রাক চালক শেখ নজরুল এদিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, যিনি তাঁকে মারধোর করেছে তিনি পুলিশ অফিসারই ছিলেন । কারণ ওই সময় তাঁকে মারধোর করতে দেখে অপর এক পুলিশ কর্মী ওই মদ্যপ পুলিশ কর্মীকে ’স্যার’ বলে সম্বোধন করে মারধোর না করার জন্য বারে বারে অনুরোধ করছিল। তা সত্ত্বেও ওই মদ্যপ পুলিশ আধিকারিক তাঁকে মারধর করে চলে ।’ জেলা পুলিশ সপার কামনাশীস সেন জানিয়েছেন, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।’
অন্যদিকে এই ঘটনা বিষয়ে জামালপুর থানার এক পুলিশ কর্তা যদিও দাবি করেছেন , ‘ট্রাক চালকের কাছে টাকা চাওয়া বা মারধরের অভিযোগ সত্য নয় । পুলিশের কেউ মদ্যপ অবস্থাতেও ছিল না ।থানাতেও কেউ অভিযোগ জানাতে আসেনি । ওই পুলিশকর্তা এও বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৪ টে থেকে হাইরোডে ’নো-এন্ট্রি’ চলছিল । সেই কারণে সমস্ত গাড়ি গুলি পার্কিংয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। ট্রাকটিকেও পার্কিয়ে দাঁড় করানো হয় ।এরপর ডিউটি রত পুলিশের কর্মীরা সেখান থেকে একটি দূরে গেলে ওই ট্রাক ড্রাইভার ট্রাকটি পার্কিং থেকে বের করে নিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করে । তখন কনস্টেবল শিবলাল সোরেন ট্রাকটি দাঁড় করালে ট্রাক চালকের সঙ্গে শিবলালের ধাক্কাধাক্কি হাতাহাতি হয় ।’ ডিউটিরত অবস্থায় হাতাহাতিতে জড়ানোর জন্য কনস্টেবল শিবলালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জামালপুর থানার ওই পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন ।।