এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,১৩ ফেব্রুয়ারী : ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ চলাকালীন কয়েকজন সাংবাদিকের মৃত্যুর পর বিশ্বের তথাকথিত সেকুলারদের বহু হাহুতাশ করতে দেখা গিয়েছিল । কিন্তু কাতারের সংবাদ মাধ্যম ‘আল জাজিরা’র (Al-Jazeera) এমন এক সাংবাদিকের রহস্য উদঘাটন হয়েছে,যা চমকে দেওয়ার মত । মোহাম্মদ ওয়াশাহ(Muhammad Wishah) নামে এক সাংবাদিক দিনের আলোয় সাংবাদিকতার কাজ করতেন, কিন্তু অন্ধকার নামলেই ভিড়ে যেতেন সন্ত্রাসী হামাসের দলে । ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে,
গাজা ঘাঁটিতে পাওয়া একটা ল্যাপটপে বেশ কিছু নথি এবং চিত্র রয়েছে যাতে এটা স্পষ্ট যে মোহাম্মদ ওয়াশাহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক বাহিনীর একজন সিনিয়র অপারেটিভ এবং বিমান ইউনিটের জন্য গবেষণা করেছিলেন ।
আইডিএফ-এর আরবি-ভাষার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আভিচায় আদরাই রবিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্টে লিখেছেন,’সকালে, তিনি আল জাজিরা চ্যানেলের একজন সাংবাদিক এবং সন্ধ্যায়, হামাসের একজন সন্ত্রাসী !’ আদ্রাই বলেছেন যে কয়েক সপ্তাহ আগে, সৈন্যরা উত্তর গাজার হামাসের একটি ঘাঁটিতে একটি ল্যাপটপ খুঁজে পেয়েছিল যা মোহাম্মদ ওয়াশাহ নামে একজন ব্যক্তির ছিল । সাম্প্রতিক মাসগুলিতে মধ্য গাজার বুরেজের আশেপাশের মোহাম্মদ ওয়াশাহের প্রতিবেদন আল জাজিরা চ্যানেলের সম্প্রচারে প্রদর্শিত হয়েছে, কাতারের মালিকানাধীন ওই সংবাদমাধ্যম তাকে তাদের একজন সাংবাদিক বলে অভিহিত করেছে।
আদ্রাই বলেছেন যে ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিগুলি থেকে জানা গেছে যে ৩৭ বছর বয়স্ক মোহাম্মদ ওয়াশাহ হামাসের অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ইউনিটের একজন “বিশিষ্ট কমান্ডার” এবং ২০২২ সালের শেষের দিকে, তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিমান ইউনিটের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন, কম্পিউটার থেকে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদ ওয়াশাহকে হামাসের অভ্যন্তরে কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ গেছে ৷ পোস্টটিতে ওয়াশাহকে ট্যাঙ্ক-বিরোধী অস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য অস্ত্র এবং একটি ড্রোনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মুহুর্তের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । আদ্রাই বলেন, ‘কে জানে অদূর ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার পোশাকে অন্যান্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি সম্পর্কে আমরা কত বিবরণ প্রকাশ করব ।’
গত মাসে, রাফাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয় আল জাজিরার দুই সাংবাদিক । তারা হলেন আল জাজিরার গাজা সংবাদদাতা ওয়ায়েল আল-দাহদুহ- এর ছেলে হামজা ওয়ায়েল দাহদুহ এবং এএফপি-র ভিডিও স্ট্রিংগার মুস্তাফা থুরিয়া, যিনি কাতার-ভিত্তিক টিভি আউটলেটের জন্যও কাজ করতেন, দুজনেই জানুয়ারির ঘটনায় নিহত হন। আল জাজিরা জানিয়েছে, তৃতীয় সাংবাদিক হাজেম রজব গুরুতর আহত হয়েছেন।
আইডিএফ জানিয়েছে যে এই জুটি একটি সন্ত্রাসী অপারেটিভের সাথে একটি গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় একটি ড্রোন পরিচালনা করছিলেন । সেই ঘটনার বিষয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে, আইডিএফের মুখপাত্রের ইউনিট টাইমস অফ ইসরায়েলকে বলেছে যে একটি সামরিক বিমান একজন সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করে আঘাত করেছে, যে এমনভাবে একটি ড্রোন পরিচালনা করেছিল যা আইডিএফ বাহিনীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল ।
গত ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ ইস্রায়েলে প্রবেশ করে এবং ১,২০০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে । যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক ।
তার মধ্যে একটি সঙ্গীত উৎসবে সন্ত্রাসীর হানা দিয়ে বেশ কিছু সঙ্গীতপ্রেমী মানুষকে শিরোচ্ছেদ বা গুলি করে খুন, বেশ কয়েকজন তরুনীকে ধর্ষণ ও গনধর্ষণ এবং ২৫৩ জনকে পনবন্দি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল । গাজায় এখনো ১৩৪ জন হামাসের হাতে বন্দি আছে । জবাবে ইসরায়েল গাজা-শাসক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সামরিক ও শাসন ক্ষমতা ভেঙে ফেলার এবং পনবন্দিদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ।
ইসরায়েল সাংবাদিকদের টার্গেট করার কথা অস্বীকার করে এবং বলে যে তারা বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে । গাজায় ব্যাপক হারে মানুষের মৃত্যু প্রসঙ্গে ইসরায়েল বলে যে হামাসের সন্ত্রাসীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকদের মধ্যে নিজেকে যুক্ত করে যারা মানব ঢাল হিসাবে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে,যেকারণে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় সাধারণ মানুষকে । গত বছর ১৬ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছিল,আইডিএফ কখনোই ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের টার্গেট করেনি এবং করবে না ।।