এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,১৩ ডিসেম্বর : বিগত ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে মালদার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনগুলিতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফলাফল করেছিল । কিন্তু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনগুলি থেকে তৃণমূলকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে বিজেপি । এরপর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মালদা জেলার বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে রাজ্যের শাসকদলকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে । তৃণমূলের জায়গা দখল করেছে কংগ্রেস । অন্যদিকে বিজেপি তার ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে ৷ সাম্প্রতিক মোথাবাড়ির সাম্প্রদায়িক হিংসার পর বিজেপি হিন্দুদের মধ্যে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করা হচ্ছে । বর্তমানে মালদার ১২ টি বিধানসভার আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ৮ টি, আর বিজেপির দখলে ৪টি আসন । এদিকে ২০২৬ সালের আরও এক ইসলামপন্থী দলের আবির্ভাব ঘটে গেছে এরাজ্যে । আর সেই দল হল তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-এর সর্বভারতীয় মুসলমানের ইত্তেহাদের মজলিস বা এআইএমআইএম । এআইএমআইএম মালদায় ১০ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে । ফলে শুধু তৃণমূলই নয় হৃদকম্প বেড়েছে কংগ্রেসেরও ।এআইএমআইএম -এর জেলা সভাপতি রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ওই ১০ টি বিধানসভায় তারা তাদের দলীয় কার্যালয় খুলেছেন এবং ইতিমধ্যেই জনসংযোগ বাড়াচ্ছে । জেলা জুড়ে মোট ২০ টির বেশি কার্যালয় খোলা হয়েছে । মানুষের মধ্যে ভালো সাড়াও পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেছেন ।
মালদা জেলার রাজনৈতিক চিত্র
মুর্শিদাবাদের মতই মালদা জেলা হল মুসলিম অধ্যুষিত একটি জেলা । সাম্প্রতিক বিধানসভা ও লোকসভার ভোটে মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলিতে তৃণমূলের প্রভাব দেখা গেলেও হিন্দু অধ্যুষিত আসনগুলিতে বিজেপির প্রভাব স্পষ্ট দেখা গেছে । বিগত ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে হিন্দু অধ্যুষিত গাজোল,ইংরেজবাজার,পুরাতন মালদা ও হবিবপুর আসনে বিজেপি জেতে ৷ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ হরিশ্চন্দ্রপুর,চাঁচল,মালতিপুর, সুজাপুর ও মোথাবাড়ি আসনে জেতে তৃণমূল । মিশ্র জনবিন্যাস সমৃদ্ধ আসন বৈষ্ণবনগর, মানিকচক,রতুয়া প্রভৃতি আসনগুলিও তৃণমূলের দখলে যায় । তবে মার্জিন খুব একটা বেশি ছিল না । এই নির্বাচনে শুধু মালতিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল এআইএমআইএম । জেলার মোট ৮ টি আসন তৃণমূল ও ৪ টি পায় বিজেপি । কংগ্রেস কোনো আসনেই জিততে সক্ষম হয়নি ।
এরপর বিগত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা অনুযায়ী ফলাফলে দেখা গিয়েছে একমাত্র চাঁচল ছাড়া বাকি আসনগুলিতে বিজেপি ও কংগ্রেস এগিয়ে ছিল। মালদা উত্তর লোকসভার অন্তর্গত হবিবপুর,গাজল ও পুরাতন মালদায় অনেক ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি।হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর ও রতুয়া আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস । একমাত্র চাঁচলে সামান্য ভোটের ব্যাবধানে এগিয়েছিল তৃণমূল । মালদা উত্তর লোকসভা আসনে জেতেন বিজেপির খগেন মুর্মু । মালদা দক্ষিণ লোকসভার বৈষ্ণবনগর, মানিকচক ও ইংরেজবাজার আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি । বাকি সুজাপুর,মোথাবাড়ি এবং পার্শ্ববর্তী মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা ও সামসেরগঞ্জ আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস । ফলে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস মালদায় খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই ।
এমতাবস্থায়, রাজ্যের রাজনীতিতে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দলের এন্ট্রি বিশেষ করে তৃণমূলের জন্য খুবই ক্ষতিকারক প্রমানিত হতে পারে । যে চিত্র সম্প্রতি বিহার বিধানসভার ভোটে দেখা গিয়েছিল, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যদি এরাজ্যেও হয় তাহলে বিশেষ করে মালদা জেলায় তৃণমূল অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে পারে । বিহারে মুসলিম ভোট ওয়াইসির পক্ষে যাওয়ায় ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেস ও লালু প্রসাদ যাদবের দলের ।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আরও এক মহারথির আবির্ভাব ঘটেছে । আর তিনি হলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের “কথিত” বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির । বেলডাঙ্গায় তার “বাবরি মসজিদ”-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন তোলপাড় ফেলে দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে । আগামী ২২ ডিসেম্বর তার নতুন দল ঘোষণার কথা আছে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে নওশাদ সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ), আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম-এর সঙ্গে জোট বেঁধে এবারের বিধানসভার ভোটে লড়াই করবেন । আর যদি রাজ্যে ইসলামপন্থী দলগুলি জোট বেঁধে লড়াই করে তাহলে তার প্রভাব সরাসরি তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাংকে পড়বে । বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন তা সাম্প্রতিক জনসভায় তার শারিরী ভাষায় (Body Language) প্রমান পাওয়া গেছে । এখন দেখার বিষয় তৃণমূলের ভোটকুশলী ভাড়াটে সংস্থা “আই প্যাক” কি খেলা খেলে এই পরিস্থিতিকে কতটা নিজেদের অনুকুলে আনতে পারে । এদিকে এআইএমআইএম -এর জেলা সভাপতি রেজাউল করিম জানিয়েছেন যে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তারা জেলা জুড়ে অধিকার যাত্রা করবেন । আর তাদের লড়াই মূলত এরাজ্যের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে হবে ।।

