প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ এপ্রিল : নিয়োগ দুর্নীতি সহ কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ড এখন ‘হট ইসু’ এই রাজ্যে । এইসব ইসুকে হাতিয়ার করেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেল্লা ফতে করতে চাইছে বিজেপি ও সিপিএম সহ বিরোধী দলগুলি । তাতে আবার অক্সিজেন জুগিয়েছে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবি । পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে এইসবের প্রভাব সবথেকে বেশী যেন পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে । এখানকার সিপিএমের তরুণ ব্রিগেড তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক ‘ঘাস ফুল’ আঁকা থাকা সব দেওয়াল হোয়াইটওয়াশ করে দিয়ে সেখানে কাস্তে হাতুড়ি তারা এঁকে দিচ্ছে ।স্বচক্ষে এইসব দেখার পরেও আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব থাকা তৃণমূল নেতৃত্বের সাফাই,’বিধানসভা ভোটে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাওয়া বামেরা নাকি আগামী দিনেও শুধু দেওয়ালেই রয়ে থাকতে চাইছে ।’
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে তৃণমূলের রাঘববোয়ালদের একের পর এক জালে পুরে চলেছে সিবিআই ও ইডি।এর সঙ্গে আবার রয়েছে
কয়লা ও গরু পাচার মামলা।যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডলের এখন ঠাঁই হয়েছে দিল্লীর তিহার জেলে।অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ গোটা শিক্ষা দফতরটারই এখন গারদে । এই অবস্থার মধ্যে হওয়া সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূলের শোচনীয় পরাজয় দেখে অতিমাত্রায় উজ্জীবিত কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি । এর রেশ যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আছড়ে না পড়ে সেই ব্যাপারে আবার অতি সতর্ক তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই তিনি আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে শুরুকরে টানা ৬০ দিন রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে ঘুরে জনসংযোগ যাত্রায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যদিও এইসবকে কোন গুরুত্ব দিতে নারাজ
জামালপুরের সিপিএম কর্মীরা।তারা তাঁদের দলীয় নেতৃত্বের কথা মতো পঞ্চায়েত দখলের জন্য আগাম ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।তৃণমূলকে টেক্কা দিতে পুরানো কায়দায় ‘মাচা বৈঠক’ করা থেকে শুরু করে দেওয়াল লিখন ,মিটিং ,মিছিল সবই তারা পুরোদস্তুর করে যাচ্ছে।তারই মধ্যে দেওয়াল লেখায় তৃণমূলকে যেন একেবারেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সিপিএমের তরুণ ব্রিগেড । তারা হোয়াইট ওয়াশ করে দিয়েছে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অলক মাঝির সমর্থনে জামালপুরের শিবতলা থেকে হুসুমপুর পর্যন্ত চারটি বুথ এলাকায় লেখা থাকা সব দেওয়াল।এখন ওইসব দেওয়ালে কাস্তে হাতুড়ি তারা এঁকে তার পাশে পঞ্চায়েত ভোটে বাম প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা বাম কর্ভীরা লিখে দিচ্ছে । একই ভাবে দেওয়াল লেখা ও লাল পতাকায় এলাকা ছয়লাপ করে দেওয়ার কাজও বাম কর্মীরা করে যাচ্ছে জামালপুরের আরো একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় ।যা দেখে হতাশ তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ,অশান্তি পাকানোর জন্যেই নাকি সিপিএমের লোকজন এইসব করছে ।
যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি সিপিআইএম
জামালপুর-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র । তিনি বলেন,’দেওয়াল সিপিএমেরও নয়, তৃণমূলেরও নয় । দেওয়াল তো বাড়ির মালিকের ।
বাড়ির মালিক যে দলকে তাঁর দেওয়ালে লেখার অনুমতি দেবে তারাই লিখবে। জামালপুরের যে যে বাড়ির মালিক তাঁদের দেওয়ালে সিপিএম পার্টিকে লেখার অনুমতি দিয়েছেন সেখানেই আমাদের পার্টি কর্মীরা লিখছে ।:সুকুমার বাবু এও বলেন,’আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত বাড়ি মালিকের অনুমতি না নিয়ে আমাদের পার্টির কোন কর্মী ওই বাড়ির দেওয়ালে লিখতে যাবে না ।’ সুকুমারবাবুর এই বক্তব্য থেকে এটুকু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে যে সব পরিবার তাঁদের বাড়ির
দেওয়ালে তৃণমূলকে লিখতে দিয়েছিলেন তাঁরা
এখন তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন ।
এইসব জেনে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সাফ জবাব,’তৃণমূল এখন জনবিচ্ছিন্ন ।’
বিজেপি নেতারা আবার সিপিএম কর্মীদের এই অগ্রণী ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ । তারা আবার আগামী মঙ্গলবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে জামালপুরে সভা করিয়ে সিপিএম ও তৃণমূল দুই দলকেই ধাক্কা দিতে চাইছে।তারই প্রস্তুতি বৈঠকে যোগ দিতে জামালপুরে এসে জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন,’এখন তো তৃণমূলে দেওয়াল লেখার লোক পর্যন্ত নেই । আর বাম কংগ্রেস জোট কোথাও একটা দুটো দেওয়াল লিখে মিডিয়াকে ডেকে নিয়ে হাইলাইট করছে। কিন্তু বিজেপি কর্মীরা অসংখ্য দেওয়াল লিখলেও তা নিয়ে সিপিএমের মত ঢাক ঢোল পেটাতে যায় নি। তাই হয়তো সেটা চোখে পড়ছে না ।’
তৃণমূল বিধায়ক অলক মাঝি বামেদের প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন,’গা জোয়ারি করে সিপিএম কর্মীরা তৃণমূলের লেখা দেওয়াল দখল করেছে। প্রশাসনিক ভাবে ছাড়াও দলীয় ভাবেও আমরা এর বিরুদ্ধে লড়বো । ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে গোটা বাংলার মানুষ সিপিএমকে হোয়াইটওয়াশ করে দিয়েছে । তার পরেও ওরা এখন পঞ্চায়েত দখলের দিবাস্বপ্ন দেখছে। ওদের সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে । বাংলার মানুষের রায়ে পঞ্চায়েত ভোটের পর সিপিএমের অস্তিত্ব শুধু দেওয়ালেই রয়ে থাকবে ।’।