জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আসানসোল(পশ্চিম বর্ধমান), ২১ এপ্রিল : সম্প্রতি স্থানীয় একটি পাক্ষিক পত্রিকার সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বিস্ফোরক মন্তব্য করল একটি বহুজাতিক সংস্থার বাণিজ্যিক বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রধান দেবশীষ দাস। লোকসভা নির্বাচনের আগে তার এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।দেবশীষবাবু বলেন,’এক সময় শিল্পের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গের। একের পর এক শিল্প গড়ে উঠেছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই সময় কারখানার সাইরেনের শব্দে ঘুম ভাঙত আশেপাশের বাসিন্দাদের। কর্মীদের কোলাহলে মুখরিত থাকত গোটা শিল্পাঞ্চল। কিন্তু সে সব এখন অতীত। আজ সর্বত্রই বিরাজ করছে শ্মশানের নিস্তব্ধতা।’ এমনকি ভারতের রূঢ় অঞ্চল নামে পরিচিত আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এখন শুধুই শ্রমিকদের হাহাকার এবং তা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন দেবাশীষ দাস।
তিনি আরও বলেন,’আমি রাজনীতির জগতের লোক নই। বাস্তবটাই তুলে ধরছি মাত্র। এক সময় আসানসোল থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের অধীনে অনেকগুলো বড় বড় কারখানা ছিল। আজ সেগুলো হয় বন্ধ অথবা রূগ্ন। এর দায় কার? তিনি বলেন, বাম শ্রমিক সংগঠনের জঙ্গি আন্দোলন কারখানা বন্ধের প্রধান কারণ হলেও সেগুলো চালু করার বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগ কোথায়? গত দশ বছর ধরে কেন্দ্রে বিজেপি পরিচালিত সরকার আছে। অথচ এই রাজ্যের বিজেপির কোনো সাংসদকে দেখা গেলনা কারখানাগুলো চালু করার বিষয়ে সংসদে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে। অথবা উদ্যোগ যে নিয়েছে তার স্বপক্ষে কোনো নথি প্রমাণ হিসাবে জনগণের সামনে তুলে ধরেছে। কী করে এদের বিশ্বাস করা যাবে? বারবার বলা হয় সিঙ্গুর থেকে টাটাদের নাকি তাড়ানো হয়েছে! সত্যিই কি তাই? টাটাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তির নথি কোথায়? তাছাড়া একটা গাড়ির কারখানা তৈরি করতে কত একর জমি লাগতে পারে? বিএসএনএল কাদের দক্ষতার জন্য ধুঁকছে? রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তোলার আগে কেন্দ্র সরকার বলুক এই রাজ্যে কেন্দ্র সরকার পরিচালিত বন্ধ বা রুগ্ন কারখানাগুলো চালু করার ব্যাপারে গত দশ বছর ধরে কী ধরনের উদ্যোগ তারা নিয়েছে? সেগুলো পুনরায় চালু হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে যাবে। অথচ এটা নিয়ে কেউ কিছু বলছেনা। শুধুই নোংরা রাজনীতি চলছে।’
এদিকে বাণিজ্যিক কর্তার এহেন বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে। দেবাশীষ দাস তাঁর মন্তব্যকে ‘অরাজনৈতিক’ বললেও লোকসভা ভোটের আবহে এই মন্তব্যকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আদপে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠছে । অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে আসানসোলের বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা খোলার বিষয়ে বিগত প্রায় ১৩ বছরে রাজ্য সরকার আদপেই কি উদ্যোগী হয়েছিল ? নতুন কলকারখানা স্থাপনের বিষয়ে তারা কতটা সফল হয়েছে ? এছাড়া,সিঙ্গুরে টাটার একলাখি গাড়ি কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে মমতা ব্যানার্জির ‘জঙ্গি আন্দোলন’ কি দায়ি নয় ?