প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ আগস্ট : বাংলার পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের সংখ্যা ক্রমশই যেন দীর্ঘ হচ্ছে। অনুব্রত মণ্ডলের পর এবার রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ক্ষোভ উগরে দিলেন পুলিশের বিরুদ্ধে ।নিজের বিধানসভা এলাকা পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার আই.সি’র বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী থানা ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি মন্তেশ্বর থানার আইসিকে পক্ষপাতহীন হওয়ার এবং গভীর রাতে গৃহস্থের বাড়িতে গিয়ে দরজা ঠোকা বন্ধ করার বার্তাও দিয়েছেন।এই সংক্রান্ত ভিডিও এখন মন্তেশ্বরের বাসিন্দাদের ফোনে ফোনে ঘুরছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী। তা সত্ত্বেও পুলিশ কে উদ্দেশ্য করে রাজ্যেরই একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ার ঘটনা বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
বীরভূম জেলার অন্যতম হেভিওয়েট নেতা অনুব্রত মণ্ডল সম্প্রতি বোলপুর থানার আইসি কে কদর্য ভাষায় হুমকি দেন। তা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এরপর গত শনিবার বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপকে নিশানা করে অনুব্রত মণ্ডল তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন।তিনি অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কালি লাগানো, একের পর এক তৃণমূল নেতা খুন ,এইসব আগে বীরভূমে ছিল না। এই পুলিশ সুপার আসার পর থেকেই এই সংস্কৃতি শুরু হয়েছে“। জানা গিয়েছে, অনুব্রতর পথ ধরে ওইদিন’ই সন্ধ্যায় নিজের বিধানসভা পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার আই.সি’র বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।এমনকি তিনি আইসি’র বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভও উগরে দেন ।
মন্তেশ্বর বিধানসভার অধীন মেমারির সাতগেছিয়া এলাকায় রয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বিধায়ক কার্যালয়। ’পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচী নিয়ে শনিবার সেখানেই দলের নেতা ও কর্মীদের নিয়ে আলোচনা সারেন। আলোচনা শেষে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মন্তেশ্বর থানার আইসি’র বিরুদ্ধে সরব হন। একই সাথে তিনি নাম না করে ওই দিন মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমদ হোসেন শেখকেও নিশানা করেন। চলতি বছরের ৩ জুলাই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও আহমদ হোসেন শেখের সম্পর্ক,সাপে-নেউলের সম্পর্কের পর্যায়ে পৌছেচে ।
ভিডিওয় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, ’যে যে ব্যক্তি মারধর করেছিল ,তাদের বিরুদ্ধে আমি জেলার পুলিশ সুপার,জেলাশাসক, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এরা সব আসামী।’ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী আরো বলেন,“আমি মন্তেশ্বরের মানুষের সাথে আছি। আমি ধোকা দেওয়ার লোক নই। কাটমানি, মারামারি, দালালি-এসব আমি সহ্য করতে পারি না। এসব মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি ও আদর্শের বহির্ভূত কাজ।“
এইটুকু বলেই মন্ত্রী মশাই খান্ত হননি। ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানাচ্ছেন,’ তাঁর কাছে মন্তেশ্বর থানার আই.সি’র বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে।তিনি শুনতে পাচ্ছন, রাতের অন্ধকারে মন্তেশ্বর থানার আই .সি নিজে লোকের বাড়ির দরজায় লাঠি দিয়ে ঠকঠক করছে ।ওইসব বাড়িতে যে যুবতী ও বয়স্ক মহিলারা থাকছে,তারা আতঙ্কিত হয়ে দরজা খুলছে। রাত ১২-টা ১ টায়, ঘুমন্ত অবস্থায় কারুর গায়ে বস্ত্র আছে,কারুর গায়ে নেই। দরজা ঠুকে কাউকে আই. সি বলছেন-এই তোর স্বামী কোথায় ,আবার কাউকে বলছেন- এই তোর বাবা কোথায়। এটা কি কোন পুলিশের কাজ? থানার বড় বাবুর কাজ? এর থেকে তো গরু- ছাগল চরানো অনেক ভালো“।আই.সি কে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রীকে এও বলতে দেখা যায়,“কেন এই ভাবে খাকি পোষাকের ও মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করছেন। আপনি দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ছেড়ে দিন। ওই গুণ্ডা প্রকৃতির নেতা যা বলছে ,তাই আপনি একতরফা ভাবে শুনছেন। যদি আপনি নিরপেক্ষ না হন, তাহলে বাধ্য হয়ে আমায় থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে,আঙুলটা বেকানোর জায়গায় চল যাবে বলে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায়।“
মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর এহেন হুমকি,হুঁশিয়ারির কথা কানে গেলেও তা নিয়ে জেলা পুলিশের কেউ কিছু বলতে অস্বীকার করেন।একই ভবে,রাজ্য নেতৃত্ব যা বলার বলবেন বলে জানিয়ে দলের জেলা নেতারা এ নিয়ে কোন মন্তব্য না করে পাস কাটান।তবে পুলিশের প্রতি মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ক্ষোভ উগরে দেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি জেলার বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র।তিনি বলেন,বাংলার মুখ্যমন্ত্রী’ই পুলিশ মন্ত্রী। সেই পুলিশের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন রাজ্যের একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী। এর আগে বোলপুর থানার আই.সি কে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দলের নেতা অনুব্রত মণ্ডল।এর থেকে বড় লজ্জার আর কি হতে পারে!