এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ জুন : শনিবার গভীর রাতে বাঁকুড়ার জেলার নতুনগঞ্জে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের । রাত দু’টো নাগাদ বাঁকুড়া সদর থানা ও খাতড়া থানার পুলিশের বিশাল বাহিনী গিয়ে বন্ধ কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ ৷ খবর পেয়ে বিজেপি নেতাকর্মীরা এলে পুলিশের সঙ্গে তারা তুমুল বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন । পরে আরও বেশ কিছু বিজেপি কর্মীরা কার্যালয়ে জড়ো হতেই বেগতিক বুঝে চম্পট দেয় পুলিশ । কিন্তু ঠিক কি কারনে পুলিশ এহেন বিতর্কিত কান্ড ঘটালো তা বারবার জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ বিজেপির । এদিকে,পুলিশের এই প্রকার কান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি পুলিশকে “মমতা ব্যানার্জির চপ্পলের আড়ালে থাকা” বলে বিদ্রুপ করে মুর্শিদাবাদ ও মহেশতলার দাঙ্গায় পুলিশের ভূমিকা এবং বোলপুরের আইসির মা-বউ সম্পর্কে অনুব্রত মণ্ডলের কুৎসিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে ধিক্কার জানিয়েছেন ।
শুভেন্দু অধিকারী এক্স-এ লিখেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চপ্পলের’ আড়ালে থাকা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আবারও তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত করেছে, মেরুদণ্ডহীন, দলীয় শক্তি হিসেবে যারা শাসকগোষ্ঠীর পুতুল হিসেবে কাজ করে। গত রাত, প্রায় ২টার দিকে, খাতড়া এবং বাঁকুড়া পুলিশ স্টেশনের আধিকারিকরা চোর এবং ডাকাতের মতো বাঁকুড়া জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে হানা দেয়, গেট ভেঙে অন্ধকারের আড়ালে ঢুকতে চেষ্টা করে। তথাকথিত “শক্তির” এই নির্লজ্জ প্রদর্শনের মুখোমুখি হয় আমাদের সাহসী বিজেপি কর্মী এবং স্থানীয় নেতারা, যারা এই কাপুরুষোচিত ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। মমতা পুলিশ কি এই পর্যায়েই নেমে এসেছে; রাতের অন্ধকারে বিরোধী কর্মীদের হয়রানি করার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আসল অপরাধীদের বেলায় বন্ধ করে আছে ?’
তিনি লিখেছেন,’তৃণমূলের কুখ্যাত ‘অসভ্য’ অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই সাহস কোথায়? এই সেই পুলিশ বাহিনী যারা তৃণমূলের গুন্ডাদের এবং তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মুখোমুখি হলে ভয় পেয়ে যায়। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে মণ্ডল বোলপুরের ইন্সপেক্টর-ইন -চার্জকে অশ্লীল গালিগালাজ এবং হুমকি দিচ্ছেন, তার স্ত্রী এবং মাকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করছেন। তবুও, মেরুদণ্ডহীন পুলিশ কী করেছে? কিছুই না।’
তিনি আরও লিখেছেন,’কয়েকদিন আগে মহেশতলায় পাথর ছোঁড়া জিহাদিদের দিকে সাদা রুমাল উড়িয়ে মমতা পুলিশের আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত কেউ ভুলতে পারে না। রক্তাক্ত কাপুরুষ । মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিন্দু-বিরোধী হিংসার সময়, যেখানে জনতা দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে, বোমা ব্যবহার করে এবং পুলিশের গাড়িতে হামলা করে। জিহাদি দাঙ্গাকারীদের মুখোমুখি হওয়ার সময়,এই দুষ্কৃতীদের দমন করার পরিবর্তে মমতা পুলিশ দোকানগুলিতে আশ্রয় নেয় । তাদের টেবিলের নীচে লুকিয়ে থাকার, মাথায় ফাইল ঢেকে রাখার ইতিহাস রয়েছে, তারা থানায় আক্রমণকারী তৃণমূল গুন্ডাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়।’
সব শেষে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’বাংলার মানুষ এমন পুলিশ বাহিনীর কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করে না, যারা বিরোধী দল এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করে কিন্তু তৃণমূলের গুন্ডা বা তৃণমূল দলের আশ্রয়ে থাকা অন্যান্য আইন ভঙ্গকারীদের মুখোমুখি হলে তারা টিএমসির পার্টি অফিসে আশ্রয় নেয় । এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়, এটি বিদূষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি কাজ, যারা পশ্চিমবঙ্গের জনগণের কাছ থেকে সমস্ত সম্মান হারিয়ে ফেলেছে। বৈধ কারণ এবং নথিপত্র ছাড়াই রাতে বিজেপি পার্টি অফিসে অবৈধভাবে প্রবেশের এই প্রচেষ্টার আমি নিন্দা জানাই। ধিক্কার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।’
যদিও বিজেপির কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি৷ তিনি জানিয়েছেন,খাতড়ায় তুহিন মান্ডির উপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত বাঁকুড়ার বিজেপি কার্যালয়ে আত্মগোপন করে আছে এমন খবর আসার পরেই অভিযান চালানো হয়েছিল। দলীয় কার্যালয়ের দরজায় থাকা তালা ভেঙে পুলিশ ভিতরে ঢোকে। কিন্তু কোনও আসবাব ভাঙচুর করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন । উল্লেখ্য,শুক্রবার রাতে খাতড়ায় আক্রান্ত হন রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডির স্বামী তুহিন মান্ডি । তুহিনকে মারধরকারীরা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ তৃণমূলের ।।

