প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ এপ্রিল : “মাটি তীর্থ“- বঙ্গের প্রশাসন থেকে শুরু করে কৃষক মহল, সকলেই এই নামটার সঙ্গে পরিচিত। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দক্ষিণবঙ্গের চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির জন্যে বর্ধমানে যে ‘কৃষি বিকাশ কেন্দ্র’ গড়ার উদ্যোগ নেন সেটাই ’মাটি তীর্থ’ নামে পরিচিতি পায় ।বর্ধমানের সাধনপুরে রয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।তারই লাগোয়া ’মাটি তীর্থের’ মাঠের পরিকাঠামো খাতে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ও হয়। সেখানে ফি বছর ’মাটি মেলার’ উদ্বোধন করতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনার পর থেকে ’মাটি মেলা’ শিকেয় ওঠে। আগাছা আর ঝোপ জঙ্গল এখন মেলার মাঠের দখল নেওয়ায় সেখানে আড্ডা বেড়েছে সাপের।এমনকি মেলার মাঠে মঞ্চ ও ঘর সহ অন্য যে সব পরিকাঠামো গড়ো তোলা হয়েছিল সে সবও ভেঙে পড়েছে।এমন “মাটি তীর্থ“ প্রাঙ্গন ভোটের ইশু হবে না তা কি হয় ! শেষ অব্দি সেটাই হয়েছে ।
বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে দিলীপ ঘোষকে।তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রাক্তন অবাঙালি ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করেছে। দু’জনেই ঝড় তুলেছেন প্রচারে। এমন আবহে শনিবার প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দিলীপ ঘোষ পৌছে যান সাধনপুরের “মাটি তীর্থ“ মেলার মাঠে। মাঠের চারপাশ ঘুরে দেখে চুড়ান্ত ক্ষোভ উগরে দেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন,“৬০০ কোটি টাকা জলে গেছে। ভাল একটা নাম “মাটি তীর্থ“ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী লিখে দিয়েছেন, “কৃষি কথা“। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যে হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছে। অতিথি নিবাস তৈরি হয়েছে। চাষিদের জন্যে কী হয়েছে? চাষিরাই বা কি পেয়েছেন ?যা দেখছি এখানে ভূতেদের আড্ডা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।তবুও হাতি পোষা হচ্ছে।”স্থানীয়রা দিলীপ ঘোষকে বলেন,’সরকারী কোটি কোটি টাকা এখানকার মাটিতে মিশে গিয়েছে ।
চাষিদের সারা বছরের কৃষি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নানা ধরনের চাষের প্রদর্শনীর লক্ষ্যে বর্ধমানের সাধনপুরের মাঠে ‘মাটি তীর্থ’ তৈরি করা হয়।তার পর ২০১৫ সাল থেকে কয়েক বছর শীতের সময় ওই মাঠে ‘মাটি মেলা’ হত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার উদ্বোধন করতেন । তারপর থেকে সেখানে সাত দিন মেলা চলত। কিন্তু মেলা শেষ হওয়ার পর সারা বছর আর কারুর সেখানে পা পড়তো না। তাই কয়েক বছর আগে কৃষি দফতর ওই মাঠে ৩৬৫ দিন গোটা দক্ষিণবঙ্গের চাষিদের বিভিন্ন চাষ নিয়ে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী থেকে হাট-হস্তশিল্পের সম্ভার বসানো,প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তব রুপ পায় নি।তবুও ওই মাঠের কয়েক লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি পড়ে রয়েছে। সেই বিদ্যুৎ বিল মেটানো নিয়েও কৃষি দফতর ও পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের মধ্যে আজও টানাপোড়েন চলছে।
জেলার কৃষি আধিকারিক নকুলচন্দ্র মাইতির বক্তব্য, ’মাটি তীর্থ’ মাঠে এখন আপাতত কোনও কর্মসূচি হচ্ছে না।মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণ জেলা পরিষদ করে । আবার জেলা পরিষদেয় কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মন্ডলের বক্তব্য,৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের অভিযোগ মিথ্যা। মাটিমেলার সময় জেলা পরিষদ পরিকাঠামো তৈরি করে দিত। কিন্তু মাঠের রক্ষণাবেক্ষণ এখনও কৃষি দফতরের হাতেই রয়েছে।মাঠ জেলা পরিষদের হাতে আসার বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে।।