প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ এপ্রিল : উপভোক্তাদের কাছ থেকে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিনিয়ত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে বিঁধে চলেছে বিরোধীরা । তারই মাঝে তৃণমূল সাংসদ দেব ওরফে দীপক অধিকারীর জ্যাঠতুতো ভাই বিক্রম অধিকারী আবার তাঁর এলাকার শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ভাবে কাটমানি খাওরার অভিযোগ এনে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন। আর এবার দুর্নীতির ইশুতে জায়গা করে নিল বাঙালির ঘরোয়া খাবার “ডিম ভাত” ।
দুয়ারে সরকারের শিবিরে খাওয়ানো ’ডিম ভাতের’ হিসেবে কারচুপিতে সায় না দেওয়ায় খোদ বর্ধমান-২ নম্বর ব্লকের কুড়মুন-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান এখন পড়ে গিয়েছেন মহা বিপাকে।এমনকি তিনি তাঁর নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।ভীতসন্ত্রস্ত প্রধান তারা মালিক তাই প্রধান পদ থেকেই পদত্যাগ করলেন। যা নিয়ে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে ।
কুড়মুন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তারা মালিক বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বিডিওর দপ্তরে তাঁর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে তারা মালিক বিডিওকে জানিয়েছেন,ষষ্ঠ পর্যায়ের দুয়ারে সরকার শিবিরের ক্যাম্পের একটি খরচের বিল নিয়ম বহির্ভূতভাবে পেমেন্ট করতে তিনি চান না। আপত্তি জানান । তার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। তার পরেও তিনি তা না মানায় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই তিনি পদত্যাগ করছেন । পাশাপাশি তারা মালিক পদত্যাগ পত্রে আরো লিখেছেন, তৃতীয় দফার দুয়ারে সরকার শিবিরেও খাবারের বিল নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তখন বিধায়ক,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, থানার ওসি বসে তার সমাধান করেন।
পঞ্চায়েত সূত্রে খবর,ষষ্ঠ দফার দুয়ারে সরকার শিবিরে ৬৫ টাক করে ২০০ জনের ’ডিম ভাত’ খাবারের বিল হয় ।সেই বিল ২০০ জনের পরিবর্তে ২৮০ জনের করতে প্রধানকে চাপ দেন উপপ্রধান বাসুদেব দে ।কিন্তু প্রধান তারা মালিক উপ প্রধানের ওই দাবী মানতে অস্বীকার করলে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে । প্রধান তারা মালিক পঞ্চায়েত অফিসে আসাও বন্ধ করে দেন।
এই নিয়ে বিডিও সুবর্ণা মজুমদার বলেন,প্রধানের পদত্যাগ পত্র অফিসের রিসিভিং সেকশনে জমা পড়েছে বলে শুনেছি। দুয়ারে সরকার শিবিরে খাবারের বিল নিয়ে সমস্যা হয়েছে বলে জানাতে পেরেছি।তৃতীয় দফার দুয়ারে সরকার শিবিরে ডিম ভাতের বিল নিয়েও উপপ্রধান বাসুদেব দে দুর্নীতি করেন বলে জানিয়ে ছিলেন প্রধান। সেই সময়েও তাকে জোর করে বিল পাশ করতে চাপ দেওয়া হয় বলে তার অভিযোগ।ভয়ে প্রধান তিন সপ্তাহ পঞ্চায়েত অফিসেই যাননি । যদিও উপপ্রধান বাসুদেবদের সাফাই যা রেজুলেশন হয়েছিল সেটা সবার মানা উচিত।একটা অনুষ্ঠানে যদি কয়কজন বেশী খেয়ে থাকেন তাহলে কি করা যাবে।প্রধানকে হুমকি ও গালিগালাজ দেবার অভিযোগ উপ-প্রধান অস্বীকার করেন।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের এমন কীর্তিকলাপ প্রকাশ্যে আসতেই যথারীতি সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্যের সব পঞ্চায়েতেই একই হাল।মহিলা প্রধান হলে উপপ্রধান সেখানে ছড়ি ঘুরিয়ে সব কিছুতেই ভাগ বসাচ্ছে।তারা দুর্নীতি করেই বড় বড় অট্টালিকায় বাস করছে।আর প্রধান দু’বেলা ঠিক মত খেতেও পান না“।অন্যদিকে সিপিএম নেতা কল্যাণ হাজরার সাফ জবাব ,“কুড়মুন ২ পঞ্চায়েত হল দুর্নীতির আখড়া। এখানে একশোদিনের কাজেও দুর্নীতি হয়েছে। উপপ্রধান নিজের স্ত্রীর নামে ৫০ দিন একশোদিনের কাজে নাম নাম লিখিয়ে নিয়েছেন“। কটাক্ষ করতে ছাড়ে নি কংগ্রেসও। জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমার্দার বলেন,এই রাজত্বে গরু ও কয়লা পাচার ছাড়াও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে সবাই জেনেছেন। এবার বাংলার মানুষ জানতে পারলেন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েতে ডিম ভাতের বিলেও কারচুপি হয়। এটা গোটা বাংলার লজ্জা ।
পাল্টা জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,দল কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না।সুতরাং পদত্যাগের কোন জায়গা নেই। কেউ অন্যায় করলে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ।।