এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩১ জানুয়ারী : দিন সরস্বতী পূজোর প্রস্তুতি নেওয়ার অপরাধে দিন দুয়েক আগে নদীয়া জেলার হরিণঘাটা দাসপোল ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাশীরাম বর্মনকে বদলির হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি আলিমুদ্দিন মন্ডলকে । সেই বিতর্কের জের মিটিতে না মিটতেই খাস কলকাতার যোগেশ চন্দ্র চৌধুরি ল’কলেজে সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের ছাত্র নেতা সাব্বির আলির বিরুদ্ধে । শুধু তাইই নয়,পুজোয় বাধা দিয়ে ধর্ষণ ও প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে । ফলে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গেছে রাজ্য জুড়ে । বিশেষ করে ওই কলেজেই পড়াশোনা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । যেকারণে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে রাজ্যের শাসকদলকে । এদিকে বারবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকায় বিজেপি অভিযোগ তুলছে যে তৃণমূলকে কাজে লাগিয়ে ইসলামি আদর্শের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে । যদিও কলেজে সরস্বতী পূজো বন্ধের হুমকিকে ‘হাস্যকর অভিযোগ’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । তবে যেটা জানা যাচ্ছে যোগেশ চন্দ্র চৌধুরি ল’কলেজে সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়ার ঘটনায় ইতমধ্যেই চারু মার্কেট থান ও অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পড়ুয়ারা ।
এই ঘটনায় রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ সভাপতি তরুনজ্যোতি তিওয়ারি এক্স-এ লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গের যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল কলেজে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার চেষ্টা এবং সেই সংক্রান্ত বিতর্ক রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সাব্বির আলির বিরুদ্ধে, যিনি সরস্বতী পুজো বন্ধ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে চারু মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় নিজেও সাব্বিরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন, তবে তিনিও তার দাপটের সামনে কার্যত অসহায়।
এই ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্যের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার চেষ্টা ক্রমশ বাড়ছে। আগে এমন ঘটনা বাংলাদেশে দেখা যেত, যেখানে মূর্তিপুজো নিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হত। এখন সেই একই প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গে দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশাসনের নীরবতা এবং বিশেষ সম্প্রদায়ের তোষণের রাজনীতি এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।’
তিনি লিখেছেন,’অভিযোগ রয়েছে যে যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল কলেজ কার্যত তৃণমূল নেতা ও তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সাব্বির আলি ও তার দলবল সেখানে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এমনকি অধ্যক্ষ নিজেই তাদের ভয়ে কলেজে যেতে ভয় পান। এই পরিস্থিতি স্পষ্টতই তৃণমূলের প্রশ্রয়প্রাপ্ত দুর্বৃত্তদের ক্ষমতা প্রদর্শনের উদাহরণ।’
তরুনজ্যোতির কথায়,’ইসলাম মূর্তিপুজোকে সমর্থন করে না। সেই আদর্শকে সামনে রেখে সাব্বির আলির মতো নেতারা তৃণমূল থেকে প্রাপ্ত রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় উৎসব বন্ধের চেষ্টা করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরস্বতী পুজো কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক ভোটব্যাংক রক্ষার কৌশল হিসেবে কট্টরপন্থীদের এই অপতৎপরতা বরদাস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের এই নীরবতা রাজ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যকে এভাবে রাজনীতির বলি হতে দেওয়া উচিত নয়। মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তবে তৃণমূলের প্রশ্রয়প্রাপ্ত এই ধরনের উগ্রবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
প্রসঙ্গত,গত ২৮ শে জানুয়ারী নদীয়া জেলার হরিণঘাটা দাসপোল ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চড়াও হয়ে আলিমুদ্দিন মন্ডল প্রধান শিক্ষককে হুমকি দিয়ে বলেছিল,’কোনদিন সরস্বতী পুজো হয়নি এবং আজও হবে না ।’ শুধু তাই নয়, মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে ওই বেপরোয়া যুবককে হুমকি দিতে শোনা গেছে সে নাকি শিক্ষককে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বদলি করে দেবে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিণঘাটা থানার পুলিশ । পুলিশ সতর্ক করলেও অভিযুক্ত আলিমুদ্দিনকে ভ্রুক্ষেপহীন দেখা যায় । ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার । তার অভিযোগ,’পশ্চিমবঙ্গকে গ্রেটার বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ।’।