এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৭ নভেম্বর : মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয় ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে । প্রচুর হিন্দু সেখানে জড়ো হয়েছিল । জড়ো হয়েছিল ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন জামাত ইসলামি, হিজবুতি এবং বিএনপি(বাংলাদেশ ন্যাশানাল পার্টি)-এর প্রচুর জঙ্গিরাও । ওই জঙ্গিরা সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে হিন্দু মনে করে পাথর ছুড়ে খুন করে রটিয়ে দেয় যে হিন্দুরা তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে । সুপরিকল্পিত ভাবে এই গুজব ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের উপর হামলা শুরু করেছে তারা । একের পর এক মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে । এদিকে হিংসার এপিসেন্টার চট্টগ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় মঙ্গলবার রাত এলাকার হিন্দুদের পরিস্থিতি কি তা জানা সম্ভব হয়নি ।
আইনজীবী সুমন কুমার রায় দাবি করেছেন, ‘মুসলিম আইনজীবীকে হিন্দু মনে করে আক্রমণ করা হয়েছিল । আইনজীবী মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম হত্যায় যারা জড়িত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হোক। আমি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।’ একই দাবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট । যদিও বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলি ওই আইনজীবীর হত্যাকাণ্ডের দায় হিন্দুদের উপর চাপিয়ে রীতিমতো প্রচার শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । মহম্মদ ইউনুসের সরকার সুকৌশলে মুসলিম আইনজীবির হত্যার দায় হিন্দুদের উপর চাপানোর চেষ্টা চালিয়েছে । ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতির পালটা বিবৃতি জারি করে বাংলাদেশের বিদেশ মন্তক বলেছে,’আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ।’
এদিকে আইনজীবীর হত্যাকাণ্ডের পর মঙ্গলবার(২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে ছিল কার্যত একটা বিভিষিকার দিন । ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন জামাত ইসলামি, হিজবুতি এবং বিএনপি(বাংলাদেশ ন্যাশানাল পার্টি)-এর মত একটা রাজনৈতিক জঙ্গিদলের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশের সাথে হিন্দুদের উপর সমবেত হামলা চালিয়েছে ।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছে,সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগ এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হামলায় ৩০ জন আহত, তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং বহু নারী হেনস্থা ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ।একজন এক্স ব্যবহারকারী (@VNouka ) লিখেছেন,’এখন ঢাকা কলেজে জ্বলছে দাউ দাউ করে আগুন! নিশ্চয়ই এই ধ্বংসযজ্ঞ জামাত শিবির হিজবুতি ও মৌলবাদী জঙ্গিদের কাজI তারা এক এক করে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল কলেজগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে. অথচ বলাৎকারের কারখানা জঙ্গিবাদের আখড়া মাদ্রাসাগুলো অক্ষত ।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বান্ডেল রোড মেথর পট্টি এলাকার মনসা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে । মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে চট্টগ্রামের হাজারী লাইন কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে মন্দির ভেঙ্গে দিয়েছে মুসলিমরা । চট্টগ্রামে হরিজন সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে । চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গী বাজারে লোকনাথ আশ্রমে হামলা হয়েছে ।
হিন্দুদের উপর এত হামলার পরেও বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুস সরকার বলেছে,’বাংলাদেশ সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারি ও হিন্দুদের হামলায় ভারতের কঠোর প্রতিক্রিয়াকে ‘দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী’ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক । বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,’বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে স্থূল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি চূড়ান্তভাবে শেষ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এইভাবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুদের সাথে সমান আচরণ করে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করে যে, প্রত্যেক বাংলাদেশীর, তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে, নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা পালন করার বা বাধা ছাড়াই মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। সকল নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের একটি দায়িত্ব। গত মাসে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনের মাধ্যমে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে।’ চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকার আবারও বলতে চায় যে দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং এটি বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। প্রশ্নধীন বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।’।