এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদিয়া,০৯ এপ্রিল : নয়া ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে রাজ্যের মুসলিম এলাকা গুলিতে ক্রমশ হিংসাত্মক বিক্ষোভ দাঁনা বাঁধছে । গতকাল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করা লোকজনদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে পুলিশকে । পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানো হয় । পাশাপাশি চলে ব্যাপক
ইট বৃষ্টি । জঙ্গিপুর-সুতিতে বিএনএস ১৬৩ জারি করা হয়েছে । তবে শুধু মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরই নয়, নদিয়ার কানাইনগর বটতলাতেও ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো লোক জনের হাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ । পুলিশকে প্রাণ বাঁচাতে পেট্রোল পাম্পের একটা ঘরে আশ্রয় নিতে হয় । সেই বিক্ষোভে “সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জিন্দাবাদ” স্লোগান ওঠে বলে জানা গেছে মএদিকে এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করেছে বিজেপি।
এই প্রকার হিংসাত্মক বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধীতায় আজ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে,বিক্ষোভ প্রতিবাদের নামে হুলিগানিজম চাললো। মাননীয়ার কথা অনুযায়ী “দুধেল গাইরা”। পুলিশের একাধিক গাড়ি তে অগ্নি সংযোগ ঘটিয়ে সরকারী সম্পত্তি নষ্ট করলো।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী হয়ে মাননীয়া আপনি চুপ কেন?’
বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া হল,’গতকাল নদিয়ার কানাই নগরের পরিস্থিতি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ররোচনায় ইসলামপন্থী জনতা পুলিশকে সহিংসভাবে আক্রমণ করে । পুলিশ অফিসারদের তাদের জীবন বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টায় পার্শ্ববর্তী একটি গ্যাস স্টেশনে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব সত্ত্বেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও, ওয়াকফ বোর্ড সম্পর্কে প্রতারণামূলক মন্তব্য করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পক্ষে আইন-শৃঙ্খলার পতনকে উপেক্ষা করছেন। এমনকি সে তার নিজের পুলিশ বিভাগকেও রক্ষা করেনি। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পুলিশ আধিকারিকদের ক্ষমতার এই রাজনৈতিক অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা আবশ্যক।’
তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’যে পুলিশ উমরপুরের পেট্রোল পাম্পে ঢুকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে— সেই একই পুলিশ আজ নিরস্ত্র, নিরীহ চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জ করে নিজেদের “শক্তিমান” প্রমাণ করতে চায়!’
নদীয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গেছে,নয়া ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার নবদ্বীপের কোতোয়ালি থানার দেপাড়ার চেকপোস্টের কাছে একটা সভা করে জমিয়তে উলামা হিন্দ । সভা শেষে কানাইনগর বটতলা পর্যন্ত মিছিল করে ওই সংগঠনের প্রায় ৬,০০০ লোকজন । তারা কানাইনগর বটতলায় অবরোধ করে । জানা গেছে, অবরোধ উঠে যাওয়ার পর ট্রাফিক পুলিশরা যখন যানজট মুক্ত করতে ব্যস্ত ছিল সেই সময় একটি পণ্যবাহী লরির উপর চড়াও হয় জামিয়ত উলেমা হিন্দের লোকেরা ৷ ভাঙ্গা হয় লরির কাঁচ । মারধর করা হয় চালক এবং খালাসীকে । পুলিশ তাদের বাঁচাতে গেলে জামিয়ত উলেমা হিন্দের লোকজন তাদের ওপর চড়াও হয়৷ পুলিশের জামার কলার ধরে মারা হয়। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ কর্মীরা পাশের একটা পেট্রোল পাম্পের অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেয় । সেখানেও ধাওয়া করে হামলাকারীরা । এই মিছিল থেকে “সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জিন্দাবাদ” স্লোগান তোলা হয়েছিল বলে জানা গেছে । নয়া ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ১০ই এপ্রিল কলকাতায় জমায়েতের ডাক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়তে উলামার নদিয়ার শান্তিপুর শাখা।
উল্লেখ্য, সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরের উমরপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন মুসলিমরা । পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে ব্যাপক পাথরবাজি করে অবরোধকারীরা । পালটা টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের অন্তত ২টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।।