এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০৭ ডিসেম্বর : মাহাসা আমিনির পর ফের এক তরুনীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মারলো ইরানের পুলিশ । নিহত তরুনীর নাম
নেদা বায়াত (Neda Bayat) । অক্টোবরের ২৬ তারিখে ইরাকের জাঞ্জান(Zanjan)-এ বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের একটি স্ট্রিট-টহল পরিষেবার গাড়ির উপরে উঠে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ওই তরুনী । আর সেই অপরাধে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে হিংস্রভাবে মারধর করতে করতে গাড়ির ওপর থেকে টেনে নিয়ে যায় এবং তাঁকে পরে গ্রেফতার করে । তারপর থেকে নেদাকে আর খুঁজে পায়নি তাঁর পরিবার ।
জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে পরিবারের লোকজনদের পাশাপাশি প্রতিবেশীরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছিল নেদাকে । অবশেষে তাঁরা জানতে পারেন নেদাকে জাঞ্জানের ইমাম হোসেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । তাঁরা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে নেদার খবর জানতে গেলে কোনো প্রকার তথ্য দিতে অস্বীকার করা হয় বলে অভিযোগ । নেদার পরিবারের অভিযোগ,নেদাকে জাঞ্জানের রেভল্যুশনারি গার্ডস ডিটেনশন সেন্টারে অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছিল । তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফ্র্যাকচার এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, এমনকি হাসপাতালে নেদাকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। যে ঘরে নেদাকে রেখে চিকিৎসা করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্টরা হাসপাতালের সেই কক্ষে তালা পরিবর্তন করত যাতে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে না পারে । তাকে হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছিল । কিন্তু তরুনীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে জাঞ্জান শহরের কেন্দ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আরমাগানখানেহে একটি নির্জন জায়গায় তাঁর মৃতদেহ কবরস্থ করে দেয় ইরানের রাষ্ট্রীয় বাহিনী । এমনকি নেদা বায়াতের পরিবারকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য কঠোরভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী,নেদা বায়াতদে ইমাম হোসেন হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রাখার খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয় স্থানীয় প্রশাসন । নেদা বায়াত থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তারা একটি ষড়যন্ত্র করে । সোমবার(৫ নভেম্বর ২০২২) সরকারী বাহিনী আজম আমান্দি নামে একজন মহিলার জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি জাঞ্জনের টিভি নেটওয়ার্কে সম্প্রচার করায় । তাঁকে দিয়ে বলানো হয়, তিনি সেই মহিলা যিনি সেদিন গাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে প্রসিকিউটর অফিস তাকে সাজা দেবে । এদিকে এই মিথ্যা স্বীকারোক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনী এতটাই প্রচার করেছিল যে লোকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে সেদিন পুলিশের গাড়ির ছাদে নেদা বায়াত নয় বরঞ্চ আজম আমান্দি নামে ওই মহিলাই ছিলেন ।
প্রসঙ্গত,বিক্ষোভ দমন করতে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ । বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের পর নৃশংসভাবে অত্যাচার করে খুন করার পর লাশ গোপন জায়গায় পাচার করে দেওয়া হচ্ছে । বিক্ষোভকারী মহিলা হলে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে গনধর্ষণ করা হচ্ছে । শুধুমাত্র হিজাব খুলে ফেলার অপরাধে ইরানি মহিলাদের উপর এমনই অমানবিক দমনপীড়ন চালাচ্ছে পুলিশ ।।