এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৯ জানুয়ারী : এমনিতেই প্রেমিকার বাবা-মা সম্পর্কে রাজি ছিল না । এদিকে প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ের যোগাযোগ করছিল তাঁর বাড়ির লোকজন । সেই কথা শুনে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিল প্রেমিকা । তাই মরিয়া হয়ে প্রেমিকার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিল কলেজ পড়ুয়া প্রেমিক । প্রেমিকার মায়ের হাত-পা ধরে সে সম্পর্ক মেনে নেওয়ার জন্য কাকুতিমিনতি করে । কিন্তু মন গলেনি প্রেমিকার মায়ের । উপরন্তু তিনি মেয়েকে ‘ভালোবাসা’ প্রমাণ চান । প্রমাণ স্বরূপ তিনি কলেজ পড়ুয়াকে বিষপানের আহ্বান জানান । আর সেই আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে বিষপান করে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল হতভাগ্য প্রেমিকের । ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানা এলাকায় । মৃতের নাম জুনেদ রহমান । মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে শ্রীমঙ্গল জুড়ে ।
জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল শহরের সুরভীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামসু মিয়ার সন্তান জুনেদ রহমান । তিনি মোহাজেরাবাদ গ্রামের হামিদ উল্লার কলেজের বিএ অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন । একই কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে ৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল জুনেদের । তবে এসম্পর্ক মেয়েটির পরিবার কখনও মেনে নেয়নি । এদিকে পারিবারিক ভাবে জুনেদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল । আর এই খবর পেয়ে মেয়েটি জুনেদকে শুনিয়ে দেয় অন্যত্র বিয়ে করলে সে বিষপান করে আত্মহত্যা করবে । অন্যদিকে মেয়েটির বাবা-মাও তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় । ফলে প্রেমিকার মুখে আত্মহত্যার কথা শোনার পর কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন জুনেদ ।
জুনেদের বন্ধু পায়েল ও সাজু জানিয়েছেন, এনিয়ে মেয়েটি তার মাকে রাজি করানোর জন্য জুনেদকে তাদের বাড়িতে যাবার জন্য বলেছিল । সেই কথা শুনে শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে প্রেমিকার বাড়িতে যায় জুনেদ । প্রেমিকার বাড়ি পৌঁছে তাঁদের বাড়ির বাহিরে রেখে জুনেদ বাড়ির ভেতর ঢোকে । জুনেদ ভেতরে গিয়ে মেয়েটির মায়ের হাত-পা ধরে কাকুত মিনতি করে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে বলে । এতে মেয়টির মা কর্ণপাত না করে আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন ।
তাঁরা বলেন,’মেয়েটির মা জুনেদকে বলেন তাঁর মেয়েকে সে সত্যিকারের ভালবাসে কিনা তা প্রমাণ দিতে হবে । কি প্রমান তা জানতে চায় জুনেদ । তখন মেয়েটির মা তাকে বিষ পান করার আহবান জানায় । আর জুনেদ ভালোবাসার মানুষকে পেতে তীব্র আবেগের বসে বাড়িতে রাখা কীটনাশকের বোতল খুলে পান করেন । অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষক্রিয়া শুরু হয় । তখন জুনেদ দৌঁড়ে বাহিরে এসে ঘটনার কথা জানায়।’
জানা গেছে,জুনেদের সঙ্গে যাওয়া দুই বন্ধু মিলে তখন তাঁকে তড়িঘড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনে । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল এবং পরে সিলেটের আল-রায়হান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হতভাগ্য প্রেমিক জুনেদ রহমানের । ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ এদিন দুপুরে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হলে শতাধিক মানুষ সেখানে ভিড় জমান । আসে মৃতের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুরাও । তাঁরা জুনেদের প্রেমিকার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানান ।
অন্যদিকে জুনেদের প্রেমিকা সাংবাদিকদের জানান,’ঘটনার দিন বিকেলে জুনেদ আমাদের বাড়িতে এসে দীর্ঘসময় মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করে । আমাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়ার জন্য মা’কে সে অনুরোধ করে। কিন্তু আমার মা তাকে জানায় জুনেদের বাবা মা যেখানে তার বিয়ে ঠিক করেছে সেখানেই যেন সে বিয়ে করে ।’ তবে বিষপান করে আত্মহত্যার খবরটি আজ জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন জুনেদের প্রেমিকা । পাশাপাশি মেয়েটির মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘জুনেদ আমাদের বাড়ি যখন এসেছিল তখন বাড়ির কোনও পুরুষ সদস্য ছিল না । এই ঘটনায় আমরা থানায় একটি জেনারেল ডাইরিও করেছি ।’
জানা গেছে,এদিকে বিকালে জুনেদের পরিবার পক্ষ থেকে তাঁর প্রেমিকা ও প্রেমিকার বাবা-মা’য়ের বিরুদ্ধে এনিয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ন কবির ।।