এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভোপাল,০৪ সেপ্টেম্বর : দুই গ্রামের মাঝামাঝি রয়েছে ক্যানেল । লাগাতার বৃষ্টিপাতে ক্যানেলের টইটম্বুর অবস্থা । প্রচন্ড গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে ক্যানেলের জল । ওই অবস্থায় দুই যুবক ক্যানেল পার হতে গিয়ে স্রোতের টানে তলিয়ে যায় । সেই সময় ক্যানেলের পাড়ে নিজের ১০ মাসের শিশুসন্তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রাবিনা কাঞ্জর( Rabina Kanjar) নামে বছর ত্রিশের মহিলা । তলিয়ে যাওয়া যুবকের মধ্যে রাজু আহিরওয়ার ( Raju Ahirwar) নামে বছর পঁচিশের এক যুবক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে “দিদি বাঁচাও” বলে চিৎকার করে ওঠে । আর ওই করুন ডাক শুনে থাকতে না পেরে নিজের শিশুসন্তানকে ক্যানেলের পাড়ে ফেলে রেখে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন রাবিনা । খরস্রোতা ক্যানেলের জল থেকে টেনে তোলেন রাজুকে । অপর যুবক জিতেন্দ্র আহিরওয়ারকেও (Jitendra Ahirwar) তিনি বাঁচানোর চেষ্টা করেন । কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন । পরের দিন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের ডুবুরিরা এসে জিতেন্দ্রর মৃতদেহ উদ্ধার করে । ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের ভোপাল জেলার কাধাইয়াকালা ( Kadhaiyakala) গ্রামের । মহিলার এই প্রকার মানবিকতা ও সাহসিকতা এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁডিয়েছে এলাকায় ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, রাবিনা কাঞ্জরের বাড়ি কাধাইয়াকালা গ্রামে । একই গ্রামের বাসিন্দা রাজু আহিরওয়ার । তাঁর বন্ধু জিতেন্দ্র আহিরওয়ারর বাড়ি পার্শ্ববর্তী খাজুরিয়া( Khajuria) গ্রামে । বৃহস্পতিবার দুই বন্ধু মিলে একটি জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়েছিলেন । কিন্তু বিকেল নাগাদ তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিল তখন মুশলধার বৃষ্টিপাত শুরু হয় । তাঁরা বাড়ি ফেরার জন্য ওই ক্যানেলের কাছে এসে দাঁড়ায় । এক গ্রামবাসীর বাইক এপাড়া রাখা ছিল । তারা যাতে ওই বাইকে চড়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে ফিরতে পারে সেই কারনে ক্যানেলের ওপাড়ের লোকজন বাইকের চাবি তাদের লক্ষ্য করে ছুড়ে দেয় । কিন্তু প্রচণ্ড জোরে হাওয়া দেওয়ায় বাইকের চাবিটি ক্যানেলের জলে পড়ে যায় । শেষে দুই বন্ধু মিলে ক্যানেলের জল পেরিয়ে ওপাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।
জানা গেছে,ইতিমধ্যে পানীয় জল আনতে নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে ক্যানেলে গিয়েছিলেন রাবিনা কাঞ্জর । ক্যানেলের জলের স্রোত দেখে তিনি দুই যুবককে জলে নামতে নিষেধ করেন । কিন্তু তাঁর নিষেধ অমান্য করেই দুই যুবক জলে নামে৷ আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তলিয়ে যায় ।
সংবাদ মাধ্যমের কাছে রাবিনা বলেন,’রাজুকে আমি চিনতাম । আমাদের গ্রামেরই ছেলে । সে যখন ‘দিদি বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল তখন আমি দুবারও ভাবিনি । আমি সাঁতার জানি, এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম আমি তাকে বাঁচাতে পারব । আমি চেষ্টা করেছি । কিন্তু রাজুর বন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না,এটাই এখন আফসোস হচ্ছে ।’
স্থানীয় থানার ইনচার্জ বিপি সিং( BP Singh) জানিয়েছেন,মহিলার সাহসিকতার জন্য তাঁকে নগদ পুরষ্কৃত করা হয়েছে । পুলিশের নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন রাবিনার ভাই । সেই কারনে তাঁকেও পুরস্কৃত করা হয় ।।
তথসূত্র ও ছবি : এনডিটিভি ।