এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,৩১ মে : দেশকে সংখ্যালঘু হিন্দু শুন্য করতে উঠেপড়ে লেগেছে বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদীদের দল । হিন্দু পুরুষদের খুন, মহিলাদের অপহরণ করে ধর্ষণের পর ধর্মান্তরিত করে মুসলিম পুরুষকে নিকাহ করতে বাধ্য করার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে বাংলাদেশে । তার উপর ঘটছে ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগ তুলে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা,ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা । বাংলাদেশের এমনই ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হল রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মাশালিয়া গ্রামের দীপু বিশ্বাস নামে এক হিন্দু যুবককে ।
জানা গেছে,দীপু বিশ্বাসের ফেসবুক হ্যাক করে ইসলামের নবীর নামে কটুক্তি করে পোস্ট করে যাচ্ছিল জিহাদিরা । সম্ভাব্য পরিণতির কথা আন্দাজ করে দ্রুত গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দীপু বিশ্বাস । কিন্তু পুলিশ তদন্তে নামার আগেই ধর্মোন্মাদ মুসলিমদের উসকে দিয়ে ওই হিন্দু যুবকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করল জিহাদিরা । ঘটনার পর ধর্মোন্মাদ মুসলিমদের ফের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কিত দীপুর পরিবার ও প্রতিবেশী হিন্দুরা । যদিও বর্তমানে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকায় আর হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,দীপু বিশ্বাস বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোকন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। কোনো জিহাদি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ইসলামের নবীর সম্পর্কে অবমাননাকর স্ট্যাটাস দিয়েছিল। বুধবার দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে তিনি নিজের আইডি খোলার চেষ্টা করেন দীপু । কিন্তু সফল হননি। তখন তিনি বিষয়টি এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান। চেয়ারম্যান তাঁকে একটা জেনারেল ডাইরি (জিডি) করার পরামর্শ দিলে তিনি শ্রীপুর থানায় জিডি করেন। ওইদিন সন্ধ্যাতেই তার বাড়িতে হামলা চালায় জিহাদিদের দল এবং ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে ।
দীপুর বিবাহিতা বোন বোন দিথী বিশ্বাস বলেন,’আমার ছেলের নামে ৫ লাখ টাকার একটি ডিপোজিট খোলার জন্য ৪ লাখ টাকা শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকেই রাস্তার লোকজন হট্টগোল করছিল। রাত সোয়া ৯টার দিকে আমাদের বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে আসে । আমি ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর)-এ কল করেছিলাম। হামলাকারীরা প্রায় বাড়িতে চলে আসায় বাধ্য হয়ে আমার ছোট বাচ্চা ও অসুস্থ মাকে নিয়ে পালিয়ে যাই। সারা রাত পাটখেতের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। সকালে বাড়ি এসে দেখি, আমাদের বাড়ির সবকিছু ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার ব্যাগে থাকা প্রায় সাড়ে চার ভরি সোনার গয়না, ৪ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
দীপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি প্রায় এক থেকে দেড় মাস আমার ফেসবুক ব্যবহার করি না। গতকাল দুপুরের দিকে জানতে পারি, আমার আইডি থেকে ধর্মীয় স্ট্যাটাস দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমি আমার আইডিতে ঢোকার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। বিষয়টি আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানাই। তিনি আমাকে থানায় জিডি করতে বলেন। আমি গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় জিডি করি। জিডির কপি থানা থেকে বালিয়াকান্দি, মধুখালী থানায় পাঠানো হয়। এর পর থেকে আমি থানাতে আছি।’
দীপু বিশ্বাসের স্ত্রী চুমকি বিশ্বাস বলেন, ‘প্রাণের ভয়ে আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। টেলিভিশন নিয়ে গেছে। ফ্রিজ ফেঙে ফেলেছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
অমিতাভ রায় নামে গ্রামের একজন বলেন, ‘আমার বাড়ি এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। হামলাকারীরা রাস্তার পাশে থাকা হিন্দুদের বাড়িতে ঢিল ছুড়েছে। আমার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
ঘটনা প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার দাস বলেন,’দীপু বিশ্বাস নামে ওই যুবক শ্রীপুর থানায় থাকার সময়ও ফেসবুক আইডি থেকে দুবার স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায়, তাঁর আইডি হ্যাক হয়েছে। আইডি হ্যাক করা ও হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’।