প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ জুলাই : হোটেলে অবৈধ ভাবে বিক্রী হওয়া মদ কিনে খাবারের সাথে খেয়ে মৃত্যু হল চার ব্যক্তির । মৃতদের নাম শেখ সুবরতি (৩৪),শেখ হালিম (৪০),চিন্ময় দে (৩৮) ও গৌতম দে (৪২)। মৃতদের মধ্যে প্রথম দু’জন বর্ধমানের বাসির সর্বমঙ্গলা পাড়া,চিন্ময় শহরের ময়ুরমহল এবং অপর মৃত গৌতম ও বর্ধমান শহর এলাকারই বাসিন্দা ।অসুস্থ হয়ে কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন এমন খবরও উঠে আসছে। তার কারণে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।খোদ বর্ধমান শহরে এমন ঘটনা ঘটায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই নড়ে চড়ে বসেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতর।শুরু হয়েছে ঘটনার তদন্ত ।
মৃতরা যে হেটেল থেকে মদ কিনে খেয়েছিল বলে খবর সেখান থেকে আবগারী দফতরের অনুমোদিত দেশী মদের বোতল উদ্ধার হয়।আর তাতেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন জেলা আবগারী দফতরের কর্তারা । ওই মদের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা আবগারী দফতরের কর্তাদের । ওই মদ প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছে আবগারী দফতর। ওই ব্যাচের মদ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়াও আবগারী দফতর শুরু করে দিয়েছে বলে খবর মিলেছে ।
এদিকে এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলেও তোলপাড় পড়ে গিয়েছে । তাই রাত কাটতেই শুক্রবার সকাল থেকে এডিজি ওয়েস্টার্ন জোন সঞ্জয় সিং ও জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেনের নেতৃত্বে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন হোটেল ও ধাবায় শুরু হয় অভিযান।বেলা বাড়তেই জেলা আবগারি দফতর বর্ধমান শহরের সমস্ত মদের দোকান বন্ধের নির্দেশ জারি করেদেয়। অবৈধ ভাবে মদ বিক্রীর বিরুদ্ধে এদিন জেলার সমস্ত থানা এলাকাতেও হোটেল ও ধাবায় পুলিশ অভিযান চালায়।অভিযানে প্রচুর মদ উদ্ধারের পাশাশি পুলিশ বেশ কয়েকজন মদ কারবারীকেও গ্রেপ্তার করেছে ।দুপুরে রাজ্য আবগারী দফতর পূর্ব বর্ধমান জেলা আবগারী দফতরের কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে ।মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে আবগারী
দফতরের কর্তারাও আলাদা ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ।
ময়নাতদন্তের জন্য শুক্রবার চার জনেরই মৃতদেহ পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে। এই মৃত্যু নিয়ে মৃতদের পরিবার এদিন দুপুর পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ ও আবগারি দফতর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।মদের বিষক্রিয়া না কি হেটেলের খাবারের বিষক্রিয়ায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে,তা নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। তার ভিত্তিতেই পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গিয়েছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,হোটেলটি
জি টি রোডের ধারে জনবহুল বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় রয়েছে।গোপনে সেই হেটেলে মদ বিক্রী করা হতো বলে অভিযোগ । মৃত ও অসুস্থরা বৃহস্পতিবার রাতে ওই হোটেল থেকে মদ কিনেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সবাই যেহেতু একসঙ্গে এক জায়গায় বসে মদ খায়নি তাই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি আলাদা আলাদা হোটেল কিংবা দোকান থেকে থেকে মদ কিনে ওই ব্যক্তিরা খেয়েছিলেন ।এক মৃতর স্ত্রী এদিন বলেন ,তাঁর স্বামী সহ পাঁচ জন মিলে মদ খেতে বসেছিল । মদ খাওয়ার পরেই তাঁর স্বামীর খিঁচুনি শুরু হয় ।মুখ দিয়ে সাদা গেঁজলা বের হতে শরু করে।অন্যদেরও পর পর অসুস্থ শুরু হয় । মহিলা জানান,তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর স্বামীকে মৃত বলে ঘোষনা করেন ।
বর্ধমান শহরবাসী অবশ্য হোটেলে অবৈধ ভাবে
মদ বিক্রী নতুন কোন ঘটনা নয় বলে জানিয়েছেন।তাঁদের বক্তব্য ,শহর বর্ধমান ও তার লাগোয়া জায়গায় থাকা হোটেল গুলিতে এবং জাতীয় সড়কের ধারে ধাকা ধাবা গুলিতে যে অবৈধ ভাবে মদ বিক্রী হয় তা পুলিশ ও আবগারী দফতর জানে না এমনটা নয় । কিন্তু সব জেনেও তারা অবৈধ ভাবে মদ বিক্রী বন্ধে কোন দিনই ব্যবস্থা নেয় নি । এখন হোটেল থেকে মদ কিনে খেয়ে চারজন মারা গেছে বলে পুলিশ ও আবগারী দফতর নড়া চড়া শুরু করেছে।অন্যদিকে বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় থাকা অভিশপ্ত ওই হেটেলের সামনে দাঁড়িয়ে এদিন ক্ষোভ উগরে দেন মধ্য বয়স্কা এক মহিলা ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা বলেন ,এই হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে মদ , চুল্লু সবই বিক্রী হয়। বিক্রী করে ’গনেশ’।পুলিশকে ম্যানেজ করেই ’গনেশ’ এই মদের কারবার চালাচ্ছিল বলে মধ্যবয়স্কা ওই মহিলা অভিযোগ করেছেন ।
মদ খেয়ে মৃত্যু, এই রাজ্যে নতুন কোন ঘটনা নয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিষাক্ত মদ খেয়ে শতাধীক মানুষের মূত্যু হয়েছিল দক্ষিন ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে।এরপর ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে একই ভাবে বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয় নদীয়ার শান্তিপুরের চৌধুরীপাড়া গ্রামে।এত মানুষের মৃত্যু সেই সময়ে রাজ্য জুড়ে হইচই ফেলে গিয়েছিল।তার রেশ কাটতে না কাটতে বৃহস্পতিবার মদ খেয়ে বর্ধমানে চারজনের মারা যাওয়ার ঘটনায় যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতর ।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন এদিন বলেন,“বৃহস্পতিবার রাতে মদ খেয়ে দু’জন মারা গেছে বলে আমরা বর্ধমান হাসপাতাল থেকে খবর পাই ।এদিন আরো দু’জন মারা যাওার খবর আসে। তবে এই মৃতদের পরিবার মদ খাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন । সবার মৃতদেহ গুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতো আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে । মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বর্ধমানের কোন হাসপাতালে কেউ ভর্তি হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে । আবগারি দফতর মদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠিয়েছে । ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার রিপোর্ট চলে আসবে । এই ঘটনার পর জেলা জুড়ে হোটেল ও ধাবায় অবৈধ ভাবে মদ বিক্রী বন্ধে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে । এই অভিযান জারি থাকবে । অবৈধ ভাবে মদ বিক্রীতে জড়িতদের কাউকেই রেয়াত করা হবে না ।’।