এইদিন ওয়েবডেস্ক,এলাহাবাদ,২৯ জুন : এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক ঋষিকেশ ত্রিপাঠী (পরিচয় রক্ষার জন্য নাম পরিবর্তিত) তার স্ত্রী প্রতিভা তিওয়ারি ও শ্বশুরবাড়ি দ্বারা ভয়ঙ্কর প্রতারণার শিকার হয়েছেন । ১৪ বছর আগে তাদের বিয়ে হয় । সন্তানও রয়েছে তাদের । সম্প্রতি ঋষিকেশ জানতে পেরেছেন যে বিয়ের আগে তার স্ত্রী মাহরুফ হাসান নামে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে নিকাহ করার জন্য আইনানুগভাবে ধর্মান্তরিত হয়েছেন এবং মেহনাজ হাসান নাম ধারণ করেছেন । সন্তানের জন্মের ১৩ বছর পর এই মর্মান্তিক সত্য বেরিয়ে এসেছে এবং বিভীষিকাময় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ঋষিকেশ উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের সিভিল লাইনস থানায় এফআইআর (নম্বর 230/2024) দায়ের করেছেন । ঋষিকেশ পুলিশকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি হিন্দু রীতি অনুযায়ী ২০১১ সালের ২৭ জুন প্রতিভাকে বিয়ে করেছিলেন। প্রতিভা, মূলত আসামের গুয়াহাটির বাসিন্দা, বিয়ের পর থেকে তার উপর অত্যাচার শুরু করে তার স্ত্রী । যৌতুকের এবং অন্যান্য অপরাধের মিথ্যা অভিযোগ করে তাকে হয়রানি করছে স্ত্রী । বৈবাহিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক চাপের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে তিনি সব মুখ বুজে সহ্য করে গেছেন । তার অভিযোগ, প্রতিভার বাবা রাধেশ্যাম তিওয়ারি এবং মা উর্মিলা তিওয়ারি এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে তারা মেয়ের ধর্মান্তরিত হয়ে নিকাহ করার বিষয়টি গোপন করে গেছেন । ঋষিকেশের অভিযোগের ভিত্তিতে, পুলিশ প্রতিভা তিওয়ারি এবং তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৯৪, ৩২৩, ৫০৪, ৫০৬ এবং ৪২৭ প্রভৃতি একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে ।
অর্গানাইজ উইকলির প্রতিবেদনে জানা গেছে, ধর্মান্তরিত ও নিকাহের পরেও সত্যটি গোপন করে এবং নিকাহের ১৫ দিনের মধ্যে ঋষিকেশের সাথে তার বিবাহের ব্যবস্থা করে প্রতিভার বাবা রাধেশ্যাম তিওয়ারি ও মা উর্মিলা তিওয়ারি । চালাকি করে বিয়ের অনুষ্ঠান আসামে না করে বারাণসীতে করা হয় । এদিকে বিয়ের পর প্রথম থেকেই, ঋষিকেশের উপর নির্যাতন চালাতে তার বিরুদ্ধে যৌতুক এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য মিথ্যা অভিযোগ তুলতে শুরু করে প্রতিভা । ঋষিকেশ যখন ইটানগরের রাজীব গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, তখন তিনি তাদের রান্নাঘরে ৫০ টিরও বেশি গুটকার প্যাকেট খুঁজে পান। তার বোন বিনীতা, যিনি সেই সময়ে তাদের সাথে থাকতেন, ঋষিকেশের গুটকা খেতে নিষেধ করলে প্রতিভা তার অনুপস্থিতিতে হাতের কব্জি কাটেন । বিনীতা প্রতিভাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ২০১৪ সালে, যখন ঋষিকেশের মা প্রতিভাকে তার গুটখার অভ্যাস সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন প্রতিভা তাকে লাঞ্ছিত করে এবং ঋষিকেশকে আক্রমণ করে, তার নাক ভেঙ্গে দেয় । ২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিভা মুকেশ চৌরাসিয়া নামে একজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ।
ঋষিকেশ যখন তার মুখোমুখি হয়, তখন সে তাকে গালি দেয় এবং তাকে ফাঁসানোর জন্য পুলিশকে ডেকে মিথ্যা অভিযোগ তোলে । প্রতিভা তার মাকে তাদের বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে তাদের সাথে বসবাস বন্ধ করে দেন । পরে প্রতিভা বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং এক মাসের জন্য নিখোঁজ হয়, সেই সময় তিনি ঋষিকেশকে ভয় দেখাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে আত্মহত্যা হুমকি দেয় ।
সে ক্রমাগত ঋষিকেশকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, “যদি তুমি কখনো আমার বিরুদ্ধে কথা বল, আমি এমন প্রচার চালাবো যে তুমি তোমার বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না।” প্রতিভা ঋষিকেশের বন্ধুবান্ধব, ছাত্র এবং পরিবারের সদস্যদের ডেকে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন, যা তিনি কখনও করেননি। তিনি তার ছাত্রদের বলেছিলেন যে ঋষিকেশের একাধিক মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিল ।
২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারী প্রতিভা তার স্বামীর ছাত্রদের বাড়িতে ডেকেছিলেন এবং অশ্লীল কথোপকথন করেছিলেন। ঋষিকেশ প্রতিবাদ করলে, প্রতিভা তাকে লোহার পেরেক দিয়ে আক্রমণ করে, যার ফলে তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে এবং দরজা বন্ধ করে দেয় । বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করার পরেই তিনি দরজা খুলেছিলেন, এই শর্তে যে তিনি কাউকে বলবেন না যে তাকে আক্রমণ করেছেন । এমনকি তিনি কাউকে কিছু বলেননি তা নিশ্চিত করতে তিনি তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত অনুসরণ করেছিলেন।
২০২২ সালের ২০ জুন, ঋষিকেশ নিজের এবং তার সন্তানদের নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে পুলিশের কাছে যান, কিন্তু প্রতিভা তাদের সন্তানদের এবং নিজেকে হত্যা করার হুমকি দেওয়ার পরে তিনি অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন। প্রতিভা ছোটখাটো তর্কের জন্য ঋষিকেশকে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন এবং বারবার তার ল্যাপটপ এবং অন্যান্য গ্যাজেটগুলি ভেঙে দেন । তার ধর্মান্তর এবং পূর্ববর্তী বিবাহের আবিষ্কারের পর থেকে, প্রতিভা তার ছাত্রীদের সাথে ঋষিকেশের ছবি আপলোড করে মিথ্যা দাবি করছে যে ছাত্রীদের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে । এই মিথ্যা প্রচারের পরে ঋষিকেশকে তার কর্মক্ষেত্রে যেতে বা এমনকি তার অফিস থেকে বের হতেও বাধা দিয়েছে।
২০২৪ সালের ৩১ মে, প্রতিভা ফেসবুকে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি এবং ঋষিকেশ বিবাহবিচ্ছেদ করছেন, যার ফলে ঋষিকেশকে প্রচুর সামাজিক চাপের সম্মুখীন করেছিল। তিনি ঋষি আগরওয়াল নামে একজন ব্যক্তির সাথে পুনরায় জোট বেধে ঋষিকেশকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন । উপরন্তু, প্রতিভা সতর্ক করেছেন যে যদি ঋষিকেশ তার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে তিনি তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসবেন।
প্রতিভা ঋষিকেশের বিরুদ্ধে তাদের সন্তানদেরও প্রভাবিত করে চলেছেন । তার কানভাঙানিতে সন্তানরা তাকে গালি দেয় এবং তার সাথে অসম্মানজনকভাবে কথা বলে। ২৩ মে, তিনি ঋষিকেশকে তার নিজের বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন, যদি তিনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন তবে তাকে ধর্ষণ এবং লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন । বর্তমানে, ঋষিকেশ তার মায়ের সাথে আয়াপ্পা নগরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ তার থাকার বিকল্প জায়গা নেই ।
এদিকে ঋষিকেশের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে প্রতিভা তিওয়ারির সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে পুলিশের সামনে ৷ পুলিশ জানিতে পারে যে ২০০৭ সালের ২৬ মে মুম্বাইয়ের ভেন্ডি বাজারের ওয়াজির ভবনে কাজী ফরিদ আহমেদ খানের উপস্থিতিতে, প্রতিভা তিওয়ারি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মেহনাজ হাসান নাম ধারণ করেন। ওই বছর ২২ জুন মাহরুফ হাসানের সাথে তার বিয়ে কাজী মুফতি এম মোকাররম দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল, যেখানে সাঈদ কালে, মাজহার আলী খান এবং নাভেদ খান উপস্থিত ছিলেন । অনুমান করা হচ্ছে প্রথম স্বামী মাহরুফ হাসানের সাথে থাকার জন্যই প্রতিভা তিওয়ারি ওরফে মেহনাজ হাসান তার হিন্দু স্বামী ঋষিকেশ ত্রিপাঠীর উপর পরিকল্পিতভাবে মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তার সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা করছেন ।।