এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),৩০ জুলাই : ছেলের ‘পালিয়ে যাওয়া রোগ’ । তাই তার পায়ে মোটা শিকলের বেড়ি পড়িয়ে রেখেছেন বাবা-মা । এভাবে প্রায় আকৈশোর কাটিয়ে দিল মঙ্গলকোটের দুরমুট গ্রামের ১৭ বছরের কিশোর শেখ সামিম । কিন্তু দীর্ঘ এক দশকের অধিক সময় ধরে বন্দি জীবন কাটাতে কাটাতে সে হাঁফিয়ে উঠেছে । তার ইচ্ছে করে প্রতিবেশী আর সব কিশোরদের মত মুক্ত জীবন কাটাতে । কিন্তু কে দেবে এই ‘বন্ধন’ থেকে মূক্তি ? এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই । তাই কারোর পরোয়া না করে পায়ে বেড়ি পড়া অবস্থাতেই মাঝে মাঝে সে একাই আশপাশটা ঘুরে দেখে । বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে সে যেচে ভাব জমায় । যখনই যার সঙ্গে দেখা হয় তাঁদের শুধু একটাই প্রশ্ন করে সামিম,’আচ্ছা,আমি খ্যাপা বলেই কি পায়ে শিকল পড়িয়ে রেখেছে ? আমি কি কোনও দিন স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে পারবো না ?’ কিন্তু আজ পর্যন্ত সামিম তার প্রশ্নের উত্তর পায়নি ।
দুরমুট গ্রামের বাসিন্দা শেখ সামিমরা ৩ ভাই-বোন । সে মেজো । দিদি সামিমা খাতুনের বিয়ে হয়ে গেছে । ভাই সাহিল চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে । তাদের বাবা মহিবুল্লা শেখ প্রান্তিক কৃষক । মা গৃহবধু । নুন আনতে পান্তা ফোরানো সংসার । সামিমের পড়াশোনা প্রাথমিক স্কুল অব্দি । তারপর আর হাইস্কুলে যাওয়া হয়নি তার । কারন ৬-৭ বছর বয়স থেকেই তার ‘মানসিক অসুস্থতা’র কারনে পায়ে শিকলের বেড়ি পড়ানো হয়েছে । তবে তার কথাবার্তায় কোনও অস্বাভাবিকতার লক্ষণ নেই ।
সামিমের অসুস্থতার বিষয়ে তার বাবা মহিবুল্লা শেখ বলেন, ‘সামিমের যখন ৬ বছর তখন গ্রামের রাস্তায় খেলা করার সময় গরুর গাড়ির সামনে এসে পড়ে । গাড়ির চাকা চলে যায় সামিমের মাথার উপর দিয়ে । দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলে । ছেলে প্রাণে বেঁচে গেলেও মানসিক সমস্যা দেখা দেয় । এমনিতে সব ঠিকঠাক থাকলেও সুযোগ পেলেই কেবল বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়েও গিয়েছিল । অনেক খোঁজাখুজির তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয় । তখন থেকেই বাধ্য হয়ে ছেলের পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছি ।’ পাশাপাশি তিনি জানান,ছেলেকে ভিন রাজ্যে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও উন্নতি হয়নি । এদিকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমি বিক্রি করতে হয়েছে । আর তাঁর চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই ।
দুরমুট গ্রামের ওই কিশোরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মঙ্গলকোটের বিডিও জগদীশ চন্দ্র বারুই বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই । খোঁজ নিয়ে দেখবো । প্রয়োজনে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবো ।’।