অভিষেক চৌধুরী,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),০৪ ফেব্রুয়ারী : নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করেও মেলেনি অ্যাডমিট কার্ড । যার জেরে পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় নাম ওঠেনি । ফলে একটা সেমিস্টার বরবাদ হতে চলেছে দেখে একাধিকবার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ইংরাজি অনার্সের ছাত্র অরুনাভ সামন্ত । এমনকি নিরুপায় হয়ে ‘দিদিকে বলো’তে পর্যন্ত ফোনও করেন ওই মেধাবী পড়ুয়া । কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি । শেষে ওই পড়ুয়া কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফেলতির অভিযোগ তুলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন । নিমেষের মধ্যে সেই ভিডিও ভাইর্যাল হয়ে গেছে । এই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । অন্যদিকে কোনও প্রকার গাফেলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ।
পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার করন্দা গ্রামে বাড়ি অরুনাভ সামন্ত নামে ওই কলেজ ছাত্রের ।
তাঁর বাবা অমলেন্দু সামন্ত ছোটখাটো ব্যবসা করেন । অমলেন্দুবাবু হৃদরোগে আক্রান্ত । নিজের চিকিৎসার খরচ চালানোর পর কোনও রকমে তিনি সংসার চালান । এদিকে বাবার চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত দোকান চালাতে হয় অরুনাভকে । এই পরিস্থিতির মাঝেই তিনি কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজে বিএ ইংরাজী অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন ।
অরুনাভ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির মাঝেই ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তাঁদের কলেজে ইংরাজি অনার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের অনলাইন পরীক্ষা হয়েছিল । বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে অ্যাডমিটের জন্য ওই বছর ১০ নভেম্বর কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ হয়। ওইদিন তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজে গিয়ে পদ্ধতি মেনে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করেছিলেন । ২৩ ডিসেম্বর অ্যাডমিট কার্ড আসে । কিন্তু অন্যান্যদের অ্যাডমিট কার্ড এলেও তাঁর আসেনি বলে জানিয়েছেন অরুনাভ ।
অরুনাভ বলেন,’অ্যাডমিট কার্ড না আসায় কার্যত উদভ্রান্ত হয়ে পড়ি । কলেজে ছুটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীর কাছে কারন জানতে চাই । তখন আমাকে বলা হয় আমার ফর্ম ফিলাপ না হওয়ার কারনেই নাকি আ্যডমিট কার্ড আসেনি । কিন্তু ফর্ম ফিলাপের যাবতীয় প্রমাণ আমার কাছেই ছিল । এরপর ওই সমস্ত প্রমানপত্রসহ কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আবেদন জানাই যাতে আমার একটা সেমিস্টার অকারণ নষ্ট না হয় । তিনি আমার আবেদনপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে ফরওয়োর্ড করে দেন । কিন্তু তিনি ওই আবেদনপত্রের উপর লিখে দেন , ‘আবেদনকারী ছাত্র ফর্ম ফিলাপের দিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলেজে উপস্থিত না হতে পারার কারণে ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি । যা সম্পুর্ন মিথ্যা।’
অরুণাভ বলেন, ‘এরপর অধ্যক্ষ মহাশয়ের ওই ফরওয়ার্ডিং লেটার আমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই । কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি । এই দেখে আমি দিশেহারা হয়ে বারবার “দিদিকে বলো”তে ফোন করি । কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি । এরপর গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করে । দেখি তাতে আমার নাম নেই । কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই আমার একটা সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেল । পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও,জীবনে কখনও ফেল না করা সত্ত্বেও আমাকে ব্যাক ক্যানডিডেট হিসাবে গন্য করা হবে ।’
জানা গেছে, রেজাল্ট প্রকাশের পর ওই পড়ুয়া হতাশ হয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন । সেখানে তিনি জানান, ‘শেষ পর্যন্ত ন্যায় না পেলে হয়তো আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না ।’ অরুনাভর অভিযোগ, ‘এই পোস্টের বিষয়ে জানতে পেরে চন্দ্রপুর কলেজের অধ্যক্ষ মহাশয় হুমকি দিচ্ছেন পোস্ট প্রত্যাহার না করলে পুলিশ দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
অন্যদিকে চন্দ্রপুর কলেজের অধ্যক্ষ কার্তিক চন্দ্র সামন্তর দাবি, ‘১০,১৬,১৯ ও ২৩ নভেম্বর এই চার দিন অনলাইনে ফর্মফিলাপের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল । কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা যাচ্ছে অরুণাভ সামন্ত ওই নির্দিষ্ট দিনগুলিতে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করেনি । তবে ওই পড়ুয়ার ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে ।’ এদিকে নির্দিষ্ট দিনগুলির মধ্যে ফর্ম ফিলাপ না করলেও ফর্ম ফিলাপের জন্য যে নির্দিষ্ট ফি ধার্য করা হয়েছিল অরুনাভ তা জমা করেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ । ওই পড়ুয়া যদি ফর্ম ফিলাপ নাই করে থাকেন তাহলে পরীক্ষার জন্য ধার্য ফি কিভাবে জমা হল, এনিয়ে প্রশ্ন উঠছে ? এই বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষের দাবি,টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য এটা হতে পারে ।
তবে ওই পড়ুয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে যে পোস্ট করেছেন তার প্রতিবাদ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ । তবে তিনি ওই পোস্ট তুলে নেওয়ার জন্য পড়ুয়াকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ।।