এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,১৮ জানুয়ারী : হুগলি জেলার গুড়াপে নাবালিকার ধর্ষণ-হত্যা মামলায় ৫২ দিনে আসামির ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল চুঁচুড়ার বিশেষ পকসো আদালত । কুলতলি, জয়গাঁয় ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর এবার গুড়াপেও অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে সাজা ঘোষণা হল। এই ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন সাফল্য’ হিসাবে দেখছে রাজ্য পুলিশ । রাজ্য পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে এনিয়ে লেখা হয়েছে, ‘জয়নগর-ফরাক্কার পর ফের নজিরবিহীন সাফল্য, গুড়াপে নাবালিকার ধর্ষণ-হত্যা মামলায় বিচার মাত্র ৫২ দিনে, ফাঁসির আদেশ অভিযুক্তের ।সংবাদমাধ্যমের দৌলতে ঘটনা এতদিনে অজানা নয় কারোরই। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলার অন্তর্ভুক্ত গুড়াপ থানার মামলা। পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতন ও খুন। পরিবারের কথা বাদই দিলাম, আমাদের কাছেও এই ঘটনা এতটাই মর্মান্তিক যে বিশদ বিবরণ উহ্য থাক।’
ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর । গুড়াপের একটি গ্রামে ৫ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে । ওইদিন বিকেলে মেয়েটি খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে প্রতিবেশী অশোক সিংয়ের বাড়িতে এক প্রকার জোর করে ঢুকলে মেয়েটির নিথর দেহ কম্বল, মশারি, কাঠ চাপা অবস্থায় দেখতে পায় পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা । পুলিশ প্রতিবেশী অশোক সিংকে গ্রেফতার করে ।
রাজ্য পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে এই বিষয়ে লেখা হয়েছে,মামলায় অভিযুক্ত ৪২ বছরের প্রতিবেশী অশোক সিংকে ‘জেঠু’ বলে ডাকত শিশুটি। সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-এর ২৪ নভেম্বর অর্থাৎ ঘটনার রাতেই তাকে গ্রেফতার করে গুড়াপ থানার পুলিশ। পরদিন, ২৫ নভেম্বর, ডি.এস.পি প্রিয়ব্রত বক্সীর নেতৃত্বে গঠিত হয় স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)। সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন হুগলি( গ্রামীণ) জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। মামলায় তদন্তকারী অফিসার নিযুক্ত হন ধনেখালির সার্কেল ইনস্পেকটর রামগোপাল পাল। ২৪ নভেম্বরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞরা। ময়নাতদন্ত হয় কলকাতায়, মেডিক্যাল কলেজে গঠিত হয় তিনজন অটপ্সি সার্জেন-এর মেডিক্যাল বোর্ড। আগাগোড়া পরিবারের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন সিট-এর সদস্য তথা গ্রিভান্স অফিসার সাব-ইনসপেক্টর শশধর বিশ্বাস, যিনি প্রতি মূহুর্তে শিশুটির বাবা-মাকে তদন্ত এবং বিচারপর্বের খুঁটিনাটি সম্পর্কে অবগত রাখেন।
প্রথম থেকেই এই মামলায় পেশাগত তাগিদ ছাড়াও যেন বৃহত্তর কোনও এক চালিকাশক্তি কাজ করছিল মামলায় সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যেই। হয়তো সেই কারণেই চার্জশিট জমা পড়ে ঘটনার মাত্র ১৩ দিনের মাথায়, হুগলির বিশেষ পকসো আদালতে বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তীর এজলাসে বিচারপর্ব শুরু হয় ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪। পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন শ্রী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়, দ্রুত বিচারের স্বার্থে মামলাটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ করেন বিচারক। মোট ২৭ জন সাক্ষীর বয়ান নথিবদ্ধ হওয়ার পর ৩ জানুয়ারি সমাপ্ত হয় বিচারপর্ব, এবং ১৫ জানুয়ারি, অর্থাৎ ঘটনার মাত্র ৫২ দিনের মধ্যে, অশোক সিংকে দোষী সাব্যস্ত করে আজ রায়দান পর্বে তার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই রাজ্যে এখনো পর্যন্ত এই ধরনের মামলায় এত দ্রুত বিচার আসেনি কোনোদিন। অভূতপূর্ব এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দন সংশ্লিষ্ট সকলকে।’
প্রসঙ্গত, আজ মৃত শিশুটির জন্মদিন । এইদিনেই আসামির সাজা ঘোষণা হওয়ায় মৃত শিশুর আত্মার শান্তি কামমা করে রাজ্য পুলিশ সব শেষে লিখেছে, ‘বেঁচে থাকলে আজ, ১৭ জানুয়ারি, ছ’বছরে পা দিত সেই নির্যাতিতা শিশুকন্যা। সে যেখানেই থাক, জন্মদিনে তার উদ্দেশ্যে রইল আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা আর ভালবাসা অফুরান।’।