জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মেমারি(পূর্ব বর্ধমান), ১২ এপ্রিল : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে আদিবাসীদের সুরক্ষা ও সম্মানের কথা বলেন সেখানে তৃণমূলের একদল স্থানীয় নেতা তার উল্টোপথে হাঁটতে দ্বিধা করেনা। তাদের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্টি হয় অশান্তির বাতাবরণ। এইসব নেতাদের হাবভাব দেখলে মনে হবে এরা যেন এলাকার ক্ষুদে মুখ্যমন্ত্রী, এমনই অভিযোগ । এরকম কিছু তৃণমূল নেতার জন্যেই তেতে উঠল মেমারি-১ নম্বর ব্লকের দুর্গাপুর অঞ্চলের চোটখন্ড উত্তর এলাকা।
আদিবাসীদের অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা উন্নতি ঘোষ ও তার স্বামী লাল্টু ঘোষদের পবিত্র জাহের থানের দেবদেবীর মূর্তি ভেঙে দিয়েছে, গোবর ফেলে পবিত্র স্থানটি নোংরা করেছে। এমনকি আদিবাসীদের দেখলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে, কটূক্তি করছে। সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করলে তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা মেমারি থানা, স্থানীয় বিডিও, জেলাশাসক ও এসডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বলে জানিয়েছেন ।
আদিবাসী সাঁওতাল জনজাতির কাছে সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো ‘জাহের থান’। পবিত্র জাহের থানের দেবদেবীকে অসম্মান ও কলুষিত করা, সাঁওতাল সমাজের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবাবেগের উপর পরিকল্পিত ভাবে আঘাত দেওয়ার জন্য অবিলম্বে অভিযুক্ত লাল্টু ঘোষের পরিবারের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ শুক্রবার শতাধিক আদিবাসী মেমারি-১ নম্বর বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়।
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পক্ষ থেকে শিক্ষক মহাদেব টুডুর বলেন,’আমাদের ধর্মস্থান যে অপবিত্র করেছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,’যে খাস জমিতে তিনপুরুষ ধরে আমাদের পবিত্র জাহের থান আছে তার কিছু অংশ অন্যের নামে রেকর্ড হয় কি করে! তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।’
জানা গেছে,সমস্যা সমাধানের জন্য মেমারি-১ নম্বর ব্লকের বিডিও শতরূপা দাস ও মেমারি থানার ওসি দেবাশীষ নাগের উপস্থিতিতে স্থানীয় অঞ্চল প্রধান আশিয়া বিবি শেখ, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বসন্ত রুইদাস, বিএলআরও বিশ্বজিৎ দাস সমগ্র বিষয়টি নিয়ে উন্নতি ঘোষ ও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে আলোচনা করেন। সেই সময় আদিবাসীরা বিক্ষোভ দেখায় । যদিও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিডিও শতরূপা দাস জানান,সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিতর্কিত জায়গাটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে জায়গা মাপজোখ করে উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যারা ধর্মীয় স্থান অপবিত্র করেছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যাচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষের জায়গা চিহ্নিত করে পরস্পরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।।