প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ নভেম্বর : জন্মের তিন মাসের মধ্যেই নৃশংসতার বলি হল এক শিশুকন্য। গলা টিপে শিশু কন্যাকে খুন করে নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিশুটির বাবার বিরুদ্ধে ।হন্যে হয়ে খড়ি নদীতে খোঁজ চালিয়ে পুলিশ ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের লোকজন বৃহস্পতিবার শিশু দিবসের দিন ওই শিশু কন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করে।এই ঘটনা নিয়ে এদিন ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের পানবড়োয়া গ্রামে।খুনি বাবা অবশ্য রেহাই পায় নি।শিশু কন্যাকে খুনের দায়ে পুলিশ শিশুটির বাবা জাসায় মূর্মূকে গ্রেপ্তার করেছে।তাকে এদিন কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) রাকেশ চৌধুরি জানিয়েছেন,’অমানবিক ঘটনা। মৃত শিশু কন্যার মৃতদেহটি বৃহস্পতির খড়ি নদী থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।শিশু কন্যার বাবা জাসায় মূর্মূ নিজের দোষ স্বীকার করেছে। তাকে গ্রেপ্তার করা তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে।তদন্তের প্রয়োজনে ধৃত জাসায় মূর্মূকে এদিন কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , শিশুকন্যার বাবা জাসায় মূর্মূ ও মা রোজমেরী হেমব্রম ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁরা পেশায় ক্ষেতজজুর।ধান কাটা ঝাড়ার কাজ করতে দিন ছয়েক আগে জাসায় মূর্মূ মন্তেশ্বরের শুশুনীয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পানবড়েয়া গ্রামে আসেন।সঙ্গে করে তিনি রাশমি মারাণ্ডি নামে এক মহিলাকে আনেন।তাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পানবড়েয়া গ্রামে থাকছিল জাসায় মূর্মূ।তবে জাসায় যেহেতূ বেশ কয়েক বছর ধরে পানবড়েয়া গ্রামে কাজে আসাছেন তাই রামশী মারাণ্ডী যে জাসায় মূর্মূর স্ত্রী নয় সেটা কারুর বুঝতে অসুবিধা হয় নি।পানবড়েয়া গ্রামে অন্য মহিলাকে নিয়ে স্বামীর থাকার কথা কোনভাবে রোজমেরী হেমব্রম জানতে পারেন।তারপরেই তিন মাসের শিশুকন্যাকে সঙ্গেনিয়ে বুধবার সাতসকালে ঝাড়খণ্ড থেকে সোজা মন্তেশ্বরের পানবড়েয়া গ্রামে চলে আসেন রোজমেরী ।
রোজমেরী পানবড়েয়া গ্রামে পৌছে তাঁর স্বামীকে অন্য মহিলার সঙ্গে থাকতে দেখে বেজায় চটে যান। তাঁদের স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। তারই মধ্যে জাসায় মূর্মূ তাঁর শিশুকন্যাকে আদর করার জন্য কাছে পেতে চায়।রোজমরী তখন সরল মনে তাঁর মেয়েকে দেন স্মামীর হাতে। মেয়েকে স্বামীর হাতে দিয়ে রোজমেরী প্রাত্যকৃত্য সারতে যায় । ফিরে এসে তিনি তাঁর মেয়েকে আর দেখতে পান না। তিনি স্বামীর কাছে তাঁর মেয়ের খোঁজ করেন।তখন শিশুকন্যার বিষয়ে স্বামী মুখে কুলুপ আঁটেন।
স্বামীর এমন আচরণের দেখে সন্দেহ তৈরি হয় রোজমেরী হেমব্রমের মনে । তিনি গোটা ঘটনার কথা স্থানীয়দের জানান । স্থানীয়রা চেপে ধরতেই জাসায় মূর্মূ জানান ,তিনি গলা টিপে শিশুকন্যাকে প্রাণে মেরে এলাকার খড়ি নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। জাসায় মূর্মূ এমনটা স্বীকার করার পরেই স্থানীয়রা মন্তেশ্বর থানার পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশের কাছেও শিশুকন্যাক খুন করার কথা জাসায় মূর্মৃ স্বীকার করে নেয়। এর পরেই পুলিল জাসায় মূর্মূকে গ্রেপ্তার করে । সাথে সাথে পুলিল বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের লোকজনের সহায়তা নিয়ে খড়ি নদীতে শিশু কন্যার মৃতদেহ উদ্ধারে নামে। অবশেষে বৃহস্পতিবার নদী থেকে উদ্ধার হয় শিশুকন্যায় মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের জন্য শিশু কন্যার মৃতদেহ এদিনই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। শিশু দিবসের আগের দিন এক শিশুকন্যাকে এমন নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনার স্তম্ভিত মন্তেশ্বরের বাসিন্দারা।।