এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৩ অক্টোবর : মহানবমীর ভোর রাতের দিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার রাজুর গ্রামের বড়াল পরিবারের দুর্গা মন্দিরের তালা ভেঙে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে । দুটি গেটের তিনটি তালা ভেঙে মন্দিরে ঢোকে দুষ্কৃতীদল৷ দেবীমূর্তির শরীরে পরানো প্রায় ৬ ভরি ওজনের সোনার গহনা ও দেবীর পায়ে পরানো রুপোর দামি ঝুমুর খুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা । পরিবারের অভিযোগ যে সরকারি প্রচারের ব্যানার ও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর জন্য কেতুগ্রাম থানার পুলিশের দাবিমত টাকা না দেওয়ায় পুলিশই এই চুরি করিয়েছে । ঘটনার পর প্রথম দিকে পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের না করলেও গতকাল একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় । যদিও চুরি যাওয়া গহনা আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অধরা৷ এদিকে কেতুগ্রাম থানার পুলিশকে ধিক্কার জানিয়ে দেবীদুর্গা প্রতিমার মুখে কালো কাপড় বেঁধে নিরঞ্জন করল রাজুর গ্রামের বড়াল পরিবার ।
পরিবারের বয়ান অনুযায়ী, চুরির আগে প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে ‘লোডশেডিং’ করে রাখা হয়েছিল । এমনকি বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিসে ‘লোডশেডিং’-এর কারন জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ । জেনারেটর অপারেটরকেও অপহরণ করে আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের সদস্য তপন বটব্যাল । পরের দিন সকালে পরিবারের লোকজন মন্দিরে গিয়ে দেখেন পরপর দুটি গেটের তিনটি তালা ভেঙে দেবীপ্রতিমা থেকে যাবতীয় সোনার গহনা চুরি করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা । পরিবারের দাবি ৬ ভরি সোনার গহনা সহ কিছু রূপোর গহনা চুরি হয়ে গিয়েছে। চোরেরা মন্দিরের ভিতর লণ্ডভণ্ড করে পালিয়ে যায়।
তপন বটব্যালের দাবি,’পুজোর আগে কেতুগ্রাম থানার আইসি ভিলেজ পুলিশকে দিয়ে আমাদের কাছে বলেছিলেন পুজোর সময় মন্দিরের সুরক্ষার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। তার জন্য ৩৫০০ টাকা দিতে হবে এবং সরকারি প্রচারের ফ্লেক্স বাবদ ৩২০০ টাকা দিতে হবে। এছাড়া দুজন করে নৈশপ্রহরী মন্দিরে মোতায়েন রাখতে হবে। কিন্তু আমরা টাকা দিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে রাজি হইনি।’ তার অভিযোগ,’পুলিশের প্রস্তাবে রাজি হইনি বলেই পুরো পরিকল্পনা মাফিক লোডশেডিং করে এই চুরি করা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক।আমরা এনিয়ে প্রশাসনের উচ্চস্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’
জানা গেছে, কেতুগ্রামের বড়াল বাড়ির দুর্গোৎসব ৪৮৩ বছরের প্রাচীন। দৌহিত্র বংশ বটব্যাল পরিবার মূলত পালা করে এই পুজো চালান। এছাড়া শরিক পরিবার রয়েছে মুখোপাধ্যায়রা। বনেদি পরিবার বলে নামডাক হয়েছে বটব্যালদের। অধিকাংশই পেশার সুবাদে বাইরে থাকেন। পুজোর সম সময় সবাই গ্রামে চলে আসেন। দেবীর বেশকিছু গহনা রয়েছে। বছরের অন্যান্য দিন বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়। পুজোর সময় দেবীপ্রতিমার অঙ্গে পড়ানো হয়। দুর্গামন্দিরে গ্রিল গেট ছাড়াও রয়েছে একটি কোলাপসিবল গেট। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে রাতে গ্রিল গেটে দুটি এবং কোলাপসিবল গেটে একটি তালা দেওয়া ছিল। রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে একজন নৈশপ্রহরী মন্দিরের সামনে পাহাড়াও দিচ্ছিলেন। তপনবাবু বলেন,’রাত একটা দশ নাগাদ দুজন পুলিশ কর্মী বাইকে চড়ে আমাদের মন্দিরের সামনে আসেন। আমাদের মন্দিরে পাহাড়ায় থাকা ছেলেটির সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলে চলে যায়। এরপর আমাদের ওই ছেলেটিও কিছুক্ষণ পর বাড়ি চলে যায়। রাত দেড়টা নাগাদ লোডশেডিং শুরু হয়। আমরা জেনারেটর ম্যানকে বারবার ফোন করেও ফোনে পাইনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং চলে। তখনও কিছু বুঝতে পারিনি। সকালে মন্দির খুলতে গিয়ে দেখা যায় তিনটি তালা ভেঙে চুরি হয়ে গিয়েছে।’ তিনি আরও জানান,চুরির খবর থানায় তারা না দিলেও সন্দেহজনকভাবে সকালে গাড়িতে চড়ে মন্দিরে হাজির হয় কেতুগ্রাম থানার আইসি । যা ইঙ্গিত দেয় যে পুলিশের পরিকল্পনাতেই এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে ।
উল্লেখ্য, গতবছর দুর্গাপুজোর সময় বিজয়া দশমীর আগেই কেতুগ্রামের পাচুন্দি গ্রামে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গামন্দির থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার অলঙ্কার চুরি যায়। গামছায় মুখ ঢাকা দুস্কৃতী দুর্গাপ্রতিমা থেকে একের পর এক গহনা খুলে নিচ্ছে সেই দৃশ্য ধরা পড়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে। কিন্তু সেই ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। এবছর ফের কেতুগ্রামের রাজুর গ্রামে পারিবারিক দুর্গামন্দির থেকে প্রায় সাত লক্ষ টাকার অলঙ্কার চুরির ঘটনা ঘিরে এলাকার বাসিন্দারও ক্ষুব্ধ । পাশাপাশি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে । তবে পুলিশের বিরুদ্ধেই মন্দিরের দেবী প্রতিমার গহনা চুরি করানোর অভিযোগ ঘিরে রাজ্য পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে ।।