এইদিন ওয়েবডেস্ক,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৮ সেপ্টেম্বর : সবাক চলচ্চিত্রের জনক দেবকী কুমার বসুর পৈতৃক ভিটে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের কাইগ্রামের । জমিদার বংশ । জমিদারির আভিজাত্য বজায় রাখতে বাংলার ১২৪৩ সালে বসু পরিবারের পূর্বপুরুষ তীর্থনাথ বসু এই দুর্গাপুজোর পত্তন করেছিলেন । আজও অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দেবী বন্দনা করে আসছে বসু পরিবার । ছোট দেশকি মাতা নামে পরিচিত বসু পরিবারের দেবীদূর্গা । সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পূজো হয় দেশকি মাতার ।বলিপ্রথা একেবারেই নিষিদ্ধ । ছাগবলি তো দূরের কথা চালকুমড়ো বা আঁখ কোনও কিছুই বলি হয় না।পরিবারের কারও নামে সংকল্প হয়না । সংকল্প হয় ব্রাহ্মণদের নামে। তাই পুজোর সম্পূর্ণ দায়িত্বে থাকে ব্রাহ্মণদের উপর । বিজয়া দশমীর দিন গনপতির পূজো এবং পরিবারের প্রবীন সদস্যের আশীর্বাদ নেওয়াই বিধি । এমনকি দেবীকে পরিবারের সদস্য নয়, বরঞ্চ গ্রামের দুর্লভ অর্থাৎ দুলে পরিবারের লোকজনরাই কাঁধে করে বিসর্জন করতে নিয়ে যায় ।
মন্তেশ্বর ব্লকের মামুদপুর ২ পঞ্চায়েতের কাইগ্রাম গ্রামের বসু পরিবারের দূর্গাপূজোয় রয়েছে আরও অনেক রীতিনীতি । প্রায় আড়াইশো বছর পুরনো প্রাচীন রীতিনীতি ও নিয়মকানুন মেনেই পূজো হয়ে আসছে বসু পরিবারে । প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে পূজা পদ্ধতিতে রয়েছে বেশ কিছু নিয়মকানুন । পরিবারের সদস্যরা জানান, গ্রামেই রয়েছে ব্রহ্মচারী পরিবার । সেই পরিবারে কুলদেবী বড় দেশকি মাতা ।বসু পরিবারের প্রতিমা তৈরী করার সময় বড় দেশকি মাতার পিছনে থাকা চালচিত্রের খানিকটা অংশ নিয়ে এসে প্রতিমার কাঠামোয় জড়িয়ে দেওয়া হয় । তারপর শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ । সেই কারনে বসু পরিবারের দেবী ছোট দেশকি মাতা নামেও পরিচিত । অনেকে এই দুই দেবীকে দুই বোন বলেও মনে করেন ।একচালার এই মূর্তিটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য সিংহের মুখ তৈরি করা হয় ঘোড়ার আদলে ।
পরিবারের প্রবীণ সদস্য গণেশ বসু বলেন,’পুজোর ৪ দিনই দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় । অষ্টমী ও নবমীর দিন পোলাও ভোগ দেওয়া হয় । ধুনো পোড়ানো নিয়ম আমাদের পুজোয় । তবে পরিবারের সদস্যরাই এতে অংশগ্রহন করে । বংশপরম্পরায় আজও এই রীতি চালু আছে ।’ তিনি জানান, দশমীতে ঠাকুর বিসর্জনের আগে গণেশ পূজো করা হয় । পরিবারের প্রবীণতম ব্যক্তির আশীর্বাদ নিয়ে বিসর্জনের প্রস্তুতি নেওয়াই নিয়ম । দেবীকে বিসর্জনের যাত্রার আগে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধিদাতা গণেশকে সাক্ষী রেখে যাত্রা অনুষ্ঠানের সূচনা করে । পরিবারের প্রবীণ সদস্য বাড়ির ছোটদের আশীর্বাদ করেন । মনে করা হয় তাতে বছরের যেকোনও শুভ কাজে সফলতা লাভ করা যায় । বিসর্জনের পরে বাড়ির রাধাবিনোদ মন্দিরে গীতাপাঠের আসর বসে । তাতে পরিবারের সকল সদস্য অংশগ্রহণ করে ।
বসু পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা কর্মসূত্রে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন । কিন্তু দুর্গাপুজোর কয়েকটি দিন সকলে জড়ো হন পৈতৃক ভিটেয় । মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে ।।