🌼 “হমহি আদি পুরুষ ভগবান—কুচ পেটমে না তাকত সে দরদ হয়—অব শ্বাস আউর ভিতর গয়া—অব চতুর্ভূজ হােনেক লক্ষ্মণ হুয়া–ইহ মালুম হােতা হয় কি ইহ দোনাে হাত ছােড়ায় আউর ভি শক্তিময় নিরাকার দুই হাত ভিতরসে নিকল। ॥”
সনাতন শাস্ত্র মতে যতপ্রকার দেবদেবী আছে সবই যােগীর যোগ সাধনার ক্রমবিকাশের এক একটি অবস্থা মাত্র । এইভাবে নানান দেবদেবী তত্ত্ব অতিক্রম করতে করতে যােগী পরিশেষে যখন ভগবানে রূপান্তরিত হন তখন তিনি নিজেই
ব্রহ্ম হন । যােগিরাজ এই সমস্ত নানান দেবদেবী তত্ত্ব অতিক্রম করতে করতে এখন তিনি স্বয়ংই আদিপুরুষ ভগবানে রূপান্তরিত হয়েছেন । এখন তার শ্বাসের গতি প্রায় স্থির অবস্থায় সুষুম্নায় চলছে। এই অবস্থায় তার চতুর্ভূজ নারায়ণ হওয়ার লক্ষণ
হােলাে । এই চতুভূজ নারায়ণ যােগীর ক্রমােন্নতির এক অবস্থা, এই অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর এই বর্তমান দুটি হাত ছাড়াও আরও অনন্ত শক্তিসম্পন্ন নিরাকার দুটি হাত ভেতর থেকে আবির্ভূত হল । হাত হল কর্মের প্রতীক । এখন যােগিরাজের এই যে নিরাকার দুটি হাত প্রকাশিত হল তা নির্গুণ ব্রহ্মে কি করে মিলে যাওয়া যায় তারই প্রতীক । অর্থাৎ বর্তমান দুই হাত জাগতিক কর্মের প্রতীক এবং নিরাকার দুই হাত যা অভ্যন্তর সত্তা থেকে প্রকাশিত হল তা নির্গুণ পরব্রহ্মে মিলে যাওয়ারূপ কর্মের প্রতীক। যােগী যখন জাগতিক সকল প্রকার কর্মের উর্দ্ধে অবস্থান করতে সক্ষম হন, যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের বাহ্যগতিও আর থাকে না,তখন যােগীর একমাত্র কর্ম অবশিষ্ট থাকে তা হল ব্রহ্মের সঙ্গে মিলে যাওয়া । এই অবস্থায় যােগী যদিও শান্ত সমাহিত হন বটে, কিন্তু ব্ৰহ্মে মিলে যাওয়ার জন্য,
লয় হওয়ার জন্য অভ্যন্তর চেষ্টা বর্তমান থাকে । এই নিরাকার অনন্ত শক্তিসম্পন্ন দুই হাত সেই চেষ্টারই প্রতীক যার মাধ্যমে যােগী নিরাকারে মিলে যেতে সক্ষম হন । যোগীর এই অবস্থাই অর্থাৎ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা,সেই চেষ্টারই প্রতীক চতুর্ভূজ নারায়ণ বা বিষ্ণুমূর্তি । সর্বত্র যিনি পরিব্যাপ্ত তিনিই বিষ্ণু এবং সেই সর্বত্রের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার প্রতীক বিষ্ণুমূর্তি। যোগীরাজ
এখন ঠিক এই অবস্থা লাভ করেছেন। যােগীর এই অবস্থা পর্যন্ত সগুণ অন্ধের স্থান,এর পরেই যােগী প্রবেশ করেন নির্গুণ ব্রহ্মে ।
অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রণীত “শ্যামাচরণ ক্রিয়াযােগ ও অদ্বৈতবাদ” থেকে সংগৃহীত ।