এইদিন ওয়েবডেস্ক,মিসিসিপি,১৬ আগস্ট : সরকার গর্ভপাতের বিরুদ্ধে আইন পাশ করেছে । আর আইনের যাঁতাকলে পড়ে শেষ পর্যন্ত একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হল ১৩ বছরের এক কিশোরী । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য মিসিসিপির ঘটনা । সোমবার প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুসারে, মেয়েটির মা রেজিনা পুলিশের কাছে অভিযোগে তার মেয়ের অ্যাশলে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন । তিনি জানান যে তিনি তার মেয়ের গর্ভপাত করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল যে গর্ভপাতের জন্য নিকটতম হাসপাতাল ছিল প্রদানকারী শিকাগোতে – মিসিসিপির ক্লার্কসডেলে তাদের বাড়ি থেকে নয় ঘণ্টারও বেশি পথ । প্রতিবেদনে রেজিনা উল্লেখ করেন যে শিকাগোতে গর্ভপাতের খরচ খুব ব্যয়বহুল ছিল,আর ভ্রমণ খরচ ও কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার সমস্যার কথা বিবেচনা করে মেয়ের গর্ভপাত করানোর সিদ্ধান্ত থেকে তিনি পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন ।
প্রসঙ্গত,মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট দেশব্যাপী গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করার পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার জন্য আমেরিকায় ১৪ টি রাষ্ট্রীয় আইন কার্যকর করা হয়েছে ।
এই রায়ের ঠিক এক সপ্তাহ পরে, ওহিওর একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে ১০ বছর বয়সী একজন ধর্ষিতাকে তার রাজ্যে বিধিনিষেধের কারণে গর্ভপাতের জন্য ইন্ডিয়ানা যেতে হয়েছিল । সেই মামলায় মেয়েটিকে ধর্ষণ ও গর্ভধারণের জন্য গত মাসে একজন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল । ১৫ থেকে ৩৩ বছর বয়সী আনুমানিক ২৫ মিলিয়ন মহিলা এমন রাজ্যে বাস করে যেখানে গর্ভপাতের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সোমবারের টাইম পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী,অ্যাশলে হঠাৎ ঘন ঘন বমি করতে শুরু করলে তার মা তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় । পরে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে যে অ্যাশলে অন্তসত্ত্বা । এদিকে মেয়ের গর্ভপাত করানোও জরুরি ছিল । কিন্তু ওবি-জিওয়াইএন পরিষেবা প্রদানকারী সেন্টার ছিল অনেকটা দূরে । অ্যাশলির চিকিৎসক ডঃ এরিকা বালথ্রপ রেজিনাকে দুটি ক্লিনিকের কথা জানান । একটি মিসিসিপি থেকে উত্তরে,যেটি সড়ক পথে যেতে যেতে ৯০ মিনিট সময় লাগে । অন্য ক্লিনিকটি আরও দূরে । মিসিসিপির দক্ষিণে অবস্থিত ওই ক্লিনিকে যেতে সড়ক পথে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা । এর আশেপাশের সমস্ত রাজ্য গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে । ফলে টাকার অভাব ও কাজের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে মেয়ের গর্ভপাত করানো থেকে পিছিয়ে আসেন রেজিনা । এরপর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন ।
রেজিনা বলেছেন যে অ্যাশলে গর্ভবতী হওয়ার পরে তিনি ক্লার্কসডেল পুলিশ বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি টাইমকে বলেছিলেন যে তার মেয়ে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল সে সম্পর্কে খুলে বলেছিল । মেয়ে জানায় যে একদিন সে যখন তাদের সামনের উঠোনে টিকটক তৈরি করছিল তখন একজন লোক তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় । ওই লোকটা তাকে টেনে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে । সেই সময় বাড়ির অনান্য ঘরে তার কাকা ও অনান্য ভাইবোন ছিল । কিন্তু তারা তার চিৎকার শুনতে পায়নি ।
জানা গেছে,পুলিশ ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করেছে । কিন্তু সে নাবালক হওয়ায় এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ । এদিকে গর্ভাবস্থার ৩৯ সপ্তাহ পরে, অ্যাশলে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়, যাকে তারা পিনাট ডাকনাম দেয় । অ্যাশলে টাইমকে বলেছিলেন যে সন্তানের জন্ম দেওয়ার অভিজ্ঞতা তার কাছে খুনই “বেদনাদায়ক” ছিল ।।