এইদিন ওয়েবডেস্ক,সিন্ধু(পাকিস্তান),২৮ অক্টোবর : কট্টর ইসলামি মৌলবাদী রাষ্ট্র পাকিস্তানে হিন্দু ও খ্রিস্টান মেয়েদের অপহরণ-ধর্ষণ-জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে । ফের এক ১৩ বছরের হিন্দু কিশোরীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানে । এবারের পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের (Sindh) তান্ডো মুহম্মদ খান (Tando Muhammad Khan) এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরীকে অপহরণ করেছে কয়েকজন মুসলিম যুবক । মেয়েটিকে ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর জোর করে ধর্মান্তরিত করার পর কোনো ধর্ষককেই বিয়ে করতে বাধ্য করা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে অপহৃতা কিশোরীর পরিবার । সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটা ভিডিওতে কিশোরীর মা কাঁদতে কাঁদতে তার মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার কাতর আবেদন করতে দেখা গেছে ।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে এমনই দুটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে অপহৃত কিশোরীদের পরিবার এখনো ন্যায় বিচারের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন । তার মধ্যে মিশাল রশিদ (Mishal Rasheed) নামে এক ১৫ বছরের খ্রিস্টান কিশোরী রয়েছে । যাকে ২৫ বন্দুকের মুখে অপহরণ করা হয়েছিল, এবং একটি অজানা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে তাকে চারজন লোক দ্বারা গণধর্ষণ করা হয় । এই ধর্ষণ দুর্ভাগ্যবশত প্রথাগত এবং একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পরিবেশন করা হয় । এটা বিশ্বাস করা হয় যে একবার আর কুমারীত্ব নষ্ট হলে একটি মেয়ে বিয়ের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে উঠবে, এমনকি যদি সে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অন্তর্গত হয় একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে তার একমাত্র পছন্দ হবে ধর্ষকদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করা । এরপর যথারীতি মিশালকে জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয় এবং আব্দুল সাত্তারকে (Abdul Sattar) নামে একজন ধর্ষকের সাথে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয় ।
জানা গেছে,বিয়ের মাস ছয়েক পর সাত্তারের এক ভাই মারা যায় এবং বাড়ির সবাই যখন কবরস্থ করার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিল, মিশাল পালিয়ে গিয়ে তার বাবার বাড়িতে ফিরে যেতে সক্ষম হয় । এরপর কিশোরীর পরিবার অপহরণকারী ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু পুলিশ অফিসাররা শুধু তদন্ত করতেই অস্বীকৃতি জানাননি, তারা মিশালের অপহরণকারীদের সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে দেয় । ফলে খুন হওয়ার ভয়ে মেয়ে ও তার বাবাকে আত্মগোপন করতে হয়েছে। এখন তারা সরাসরি লাহোর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এবং মিশালের অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করার আবেদন জানানো হয়েছে । সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের উপর নির্ভর করে । পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য কর্মীরা এই মামলাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে ।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের ২২ আগস্ট পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ এলাকায় । ওইদিন সামরিন আফতাব ( Samreen Aftab) নামে এক খ্রিস্টান কিশোরীকে অপহরণ করেছিল মুহাম্মদ আমির (Muhammad Amir) নামে এক মুসলিম যুবক । মেয়েটিকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয় এবং আমিরের সাথে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয় । সম্ভবত পুলিশ কাজ করবে না জেনে মেয়েটির বাবা এবং পরিবারের ছয় সদস্য মিলে একটি উদ্ধারকারী দল গঠন করে এবং সামরিনকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় । যদিও এখন তারা একটি আদালতের মামলায় আসামী । কারন আমির তাদের উদ্ধারের প্রচেষ্টাকে অপহরণ মামলা দায়ের করেছে এবং পুলিশ তাদের গ্রেফতারপূর্ব জামিনে মুক্তি দিয়েছে । এখন কিশোরীর পরিবার আদালতের নজরে শিকারের পরিবর্তে অপরাধী ।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু ধর্মের মেয়েদের অপহরণের রমরমা ব্যবসা চলছে পাকিস্তানে । রাজ্জাক মাশির মেয়ে তাবিতা (Tabita, daughter of Razzak Mashi) নামের আর এক খ্রিস্টান কিশোরীকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর চারজন অপহরণ করে মুসলিমরা । তার মামলাটি ৫ অক্টোবর পুলিশে রিপোর্ট করা হয়েছিল, একটি জন্ম শংসাপত্রের সাথে যা প্রমাণ করে যে তার বয়স বারো বছর, কারণ তার অপহরণকারীরা সম্ভবত দাবি করবে সে ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে । পুলিশ তাবিতার বিষয়ে কিছু করবে কিনা তা একটি ভিন্ন প্রশ্ন । তবে এই সমস্ত অপহরণ, ধর্ষণ, জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় দেখা যায় পাকিস্তানের পুলিশ ও আদালতকে । কিছু মামলা আদালতে চলে। তবে ভুক্তভোগীদের পক্ষে মামলায় জেতা সহজ নয় । কারন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের সাথে এমন আচরণ করা হয় যেন তারাই অপরাধী।।