দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৬ মার্চ : শ্বশুরবাড়িতে আর ফিরবে না বলে স্ত্রী জিদ করে বাপেরবাড়িতে বসে আছে । এদিকে স্ত্রীকে ফেরাতে নাছোড়বান্দা স্বামী । কিন্তু কোনো ভাবেই তিনি স্ত্রীকে রাজি করাতে পারছিলেন না । শেষে স্ত্রীর মন গলাতে এক দিনের মধ্যে ৩ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বছর ছাব্বিশের ওই যুবক । বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরে । উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা প্রদীপ যাদব নামে ওই যুবক বর্তমানে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । অবশ্য প্রদীপের স্ত্রী কাজল যাদব হরিজনই (২২) হাসপাতালে তার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,কাটোয়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজনপল্লী এলাকায় বাপের বাড়ি কাজল যাদব হরিজনের । বছর চারেক আগে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা পেশায় গাড়িচালক প্রদীপ যাদবের সঙ্গে তার দেখাশোনা করে বিয়ে হয় । বিয়ের পর থেকে
শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন কাজল । কিন্তু মাস দুয়েক আগে মামাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে বাপেরবাড়ি এসে আর শ্বশুরবাড়ি ফেরেননি তিনি । এদিকে স্ত্রীকে ফেরাতে লাগাতার ফোন করে তাকে বুঝিয়ে গেছেন প্রদীপ । কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি করাতে পারেননি । শেষে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে মঙ্গলবার কাটোয়ায় শ্বশুরবাড়ি চলে আসেন ওই যুবক । তারপর থেকে স্ত্রীর মন পরিবর্তন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি । কিন্তু কোনো কাজ হয়নি । এদিকে মুখের কথায় কাজ হচ্ছে না দেখে আত্মহত্যার হুমকি দিতে শুরু করেন প্রদীপ । তাতেও স্ত্রীর মধ্যে কোনো হেলদোল নেই দেখে শেষ পর্যন্ত চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন প্রদীপ ।
জানা গেছে,বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ প্রদীপ দুজন প্রতিবেশী জানান তিনি বিষপান করেছেন । একথা শুনে তড়িঘড়ি তাকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । যদিও প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতেও স্ত্রীর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে ওই দিন সন্ধ্যায় স্ত্রীর সামনেই ছুরি দিয়ে নিজের বুক চিড়ে ফেলেন প্রদীপ । তাকে ফের হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হয় । তবে আঘাত গুরুতর না হওয়ায় আহত যুবককে ছেড়ে দেওয়া ।
জানা যায়, রাতে শ্বশুরবাড়ি ফিরে এসে ফের স্ত্রীকে উত্তরপ্রদেশ ফিরে যাওয়ার জন্য বোঝাতে শুরু করেন ওই যুবক । কিন্তু স্ত্রীর মন গলাতে পারেননি তিনি । শেষে রাতের দিকে প্রদীপ নিজের গলায় ব্লেড চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন । রাত্রি প্রায় দেড়টা নাগাদ ফের তাকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । তবে বরাত জোরে প্রাণ বেঁচে যায় ওই যুবকের।
জানা গেছে,প্রদীপরা তিন ভাই । বাবা মা নেই । ভাইরা সকলেই বিবাহিত এবং একই পরিবারে থাকেন । তেমন কোন অশান্তি হয় না পরিবারে । প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী কাজলের মধ্যেও তেমন কোনো ঝুটঝামেলার খবর পাওয়া যায়নি । স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসেন প্রদীপ । তা সত্ত্বেও কেন শ্বশুরবাড়ি যেতে চাইছেন না ? উত্তরে কাজল বলেন,’আমার উত্তরপ্রদেশ ভালো লাগে না । তাই আর শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাই না । আমার স্বামীকে বলেছি কাটোয়াতেই থেকে যেতে ।’ তবে স্ত্রীর এই প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু জানাননি প্রদীপ । কারন শ্বাসনালীতে ক্ষতের কারণে কথা বলার মত পরিস্থিতিতে নেই তিনি ।।