দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৬ নভেম্বর : হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছর পৈঁত্রিশের এক যুবক । তড়িঘড়ি তাকে তাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন । হাসপাতালের চিকিৎসকরা যুবককে ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়েও দেয় । কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে যুবক অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । তবে এখানেই শেষ নয়,চিকিৎসকদের কাছ থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর যুবককে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে এসে পাশ্ববর্তী শ্মশানে সৎকার করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা । কিন্তু সাদা কাপড়ে মোড়া ‘মৃত’ যুবক নিজেই জল চেয়ে জল পান করেন । এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়,কিন্তু যুবককে আর বাঁচানো যায়নি । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে ।
এদিকে এই ঘটনায় ফের একবার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাতার হাসপাতালে চিকিৎসার গাফেলতির কারনেই বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল ওই যুবককে । এনিয়ে হাসপাতাল কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা ।
জানা গেছে,মৃত যুবকের নাম ছোটন সর্দার । তার বাড়ি ভাতার থানার ভাতার গ্রামের বাউড়িপাড়ায় । ভাতার বাজারে নাসিগ্রাম মোড়ে একটি চায়ের দোকান চালাতেন তিনি । আজ সোমবার ভোর তিনটে নাগাদ বাড়িতে হঠাৎ বুকে ব্যাথা শুরু হলে ছোটনকে ভাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । মৃতের আত্মীয় ছোট্টু সর্দার, উত্তম সর্দাররা বলেন,’হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা ছোটনকে দুটি ট্যাবলেট খেতে দেয়,দুটো ইনজেকশন দেয় । তারপর চিকিৎসকের কথামত আমরা ছোটনকে বাড়ি ফিরিয়ে আনছিলাম । কিন্তু রাস্তাতেই তার হেঁচকি উঠতে শুরু করে । ফের আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই । কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক জানান যে ছোটনের মৃত্যু হয়েছে । এরপর আমরা ছোটনের দেহ বাড়ি নিয়ে আসি । বাড়িতে আনার কিছুক্ষণ পরেই ছোটন উঠে বসে জলপান করে । তাকে বাঁচানোর জন্য ভাতার হাসপাতালের ভরসা না করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু রাস্তাতেই তার মৃত্যু হয় ।’ তাঁদের অভিযোগ, ‘হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা হলে ছেলেটা বেঁচে যেত ।’
স্থানীয় সূত্রে খবর,হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ছোটন সর্দার নামে ওই যুবককে ভাতার হাসপাতালে নিয়ে এলে হাসপাতালের আউটডোরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইঞ্জেকশন ও ওষুধ দিয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেক হাসপাতালে রেফার করে দেন । কিন্তু যুবক সুস্থ রয়েছেন দেখে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনছিল । আর তখনই মাঝ রাস্তায় ফের সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে । পরে ফের তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন । কিন্তু বাড়ি ফিরিয়ে আনার পর ধর্মীয় রীতি মত ‘মৃত’ যুবকের মুখে যখন গঙ্গাজল দেওয়া হচ্ছিল তখনই তার হাত পা নাড়াচাড়া করতে থাকে । যুবক নিজেই জলপান করেন । এরপর একটা গাড়িতে চাপিয়ে তাকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল । কিন্তু মাঝ রাস্তাতে যুবক নিস্তেজ হয়ে যায় ।
জানা গেছে,এই ঘটনার পর ভাতার হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে তীব্র রোষের সৃষ্টি হয় এলাকায় । পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা যুবকের দেহটি নিয়ে সোজা ভাতার হাসপাতালে আনেন । শুরু হয় বিক্ষোভ । ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ভাতার থানা থেকে পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । যদিও এখনো পর্যন্ত এনিয়ে থানায় কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে ।
দেখুন ভিডিও 👇
এদিনের এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভাতার হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় সদস্য পার্থসারথি মণ্ডল । তাঁর অভিযোগ,’ভাতার হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা খুবই খারাপ । আমরা বারবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের মানুষ বলেই মনে করেন না । অল্প শারিরীক সমস্যা হলেই বর্ধমান হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় ।’ তিনি ভাতার ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে (বিএমওএইচ) অবিলম্বে ভাতার থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছেন ।।