দিব্যেন্দু রায়,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৭ নভেম্বর : পকেটে কানাকড়ি নেই । এদিকে মদ খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে । বাড়ছে শারিরীক অস্বস্তি । শেষ পর্যন্ত মদের টাকা জোটাতে এক গ্রামবাসীর সাইকেল চুরি করে তার যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল এক সুরাপ্রেমী যুবক । শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার কয়রাপুর গ্রামে । ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায় । ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা ওই যুবককে ধরে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে । খবর পেয়ে আউশগ্রাম থানার পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে আটক করে । পুলিশ জানায় যুবকের নাম জিতুলাল মুর্মু । তাঁর বাড়ি বর্ধমানের গোপালপুর গ্রামে ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,কয়রাপুর গ্রামের কাজীপাড়ার বাসিন্দা দেবু ঘোষ নামে জনৈক এক গ্রামবাসীর সাইকেল চুরি করেছিল জিতুলাল । দেবুবাবু জানিয়েছেন,প্রতিদিনের মত এদিনও তাঁর বাজারে যাওয়ার কথা । তাই সকাল প্রায় দশটা নাগাদ মাঠ থেকে ফিরে বাড়ির বাইরে সাইকেলটি দাঁড় করিয়ে রেখে ভিতর থেকে ব্যাগ আনতে গিয়েছিলেন । কিছুক্ষণ পরে ঘুরে এসে দেখেন তাঁর সাইকেলটি উধাও হয়ে গেছে ।
জানা গেছে,প্রকাশ্য দিবালোকে বাড়ির সামনে থেকে হঠাৎ সাইকেল উধাও হয়ে যাওয়ার কথা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । শুরু হয় সাইকেলের সন্ধান । আর খোঁজাখুঁজির সময় কয়েকজন গ্রামবাসীর নজরে পড়ে কয়রাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ভাঙাচোরা জিনিপত্রের এক কারবারি দাঁড়িয়ে রয়েছে । এক যুবক একটি সাইকেলের হ্যান্ডেল,প্যাডেল,চাকা প্রভৃতি যন্ত্রাংশ খুলে তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে । আর ওই কারবারি সেগুলো ওজন করে নিজের ঝাঁকায় রেখে দিচ্ছেন ।
জানা গেছে,ওই গ্রামবাসীরা বিষয়টি দেখার পরেই দেবু ঘোষকে গিয়ে ডেকে আনেন । দেবুবাবু এসে দেখেন তাঁর ভালো সাইকেলটির যন্ত্রাংশ খুলে ভাঙাচোরা দরে বিক্রি করা হচ্ছে । এরপর ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা সাইকেল চোরকে ধরে কাজীপাড়ায় এনে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে । শুরু হয় জেরা । তখন জিতুলাল জানায়,তাঁর কাছে মদ কেনার জন্য কোনও টাকা পয়সা ছিল না । এদিকে নেশার সময় পেড়িয়ে যাওয়ায় মাথারও ঠিক ছিল না । কয়েকজনের কাছে হাতও পেতেছিল সে । কিন্তু নেশা করবে শুনে তাঁরা কেউই টাকা দেয়নি । তাই নেশার টাকা জোটাতে বাধ্য হয়ে সে ওই সাইকেলটি সে চুরি করে ।
কিন্তু কেন সে গোটা সাইকেল বিক্রি না করে যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করতে গেল ? জিতুলালের অকপট স্বীকারোক্তি,’গোটা সাইকেলটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ভাঙাচোরার কারবারি কিনতে রাজি হয়নি । সে বলে সাইকেলের যন্ত্রাংশ খুলে দিলে কেজি পিছু দাম দেবে । তাই সাইকেলের প্যাডেল,ক্যারিয়ার, হ্যান্ডেল সব খুলে খুলে ওর হাতে দিচ্ছিলাম । আর ওই কারবারি সেগুলি ওজন করে কত কেজি হল ও মোট কত দাম হল জানিয়ে দিচ্ছিল ।’ সুরাপ্রেমী ওই যুবকের এহেন আচরনে স্তম্ভিত গোটা গ্রাম । যদিও মানবিকতার খাতিরে যুবককে কেউ মারধর করেনি । শুধু বেঁধে রেখে থানায় খবর দেওয়া হয় । পরে পুলিশ তাকে আটক করে ।।