এইদিন ওয়েবডেস্ক,আত্তাপাল্লাতম,২১ ডিসেম্বর : বাংলাদেশি সন্দেহে ছত্রিশগড়ের এক যুবককে পিটিয়ে মেরে দিল কেরালার লোকেরা । রামনারায়ণ বাঘেল নামে ৩১ বছর বয়সী ওই যুবক কেরালাম আত্তাপাল্লাতম থানা এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন । কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি । শেষ পর্যন্ত ওই যুবককে পাওয়া যায় কেরালায়। তবে জীবীত নয়, মৃত। তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে গনপিটুনি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,গত ১৭ ডিসেম্বর কেরালাম আত্তাপাল্লাতম থানা এলাকায় ঘটনা ঘটে। চুরির অভিযোগে রামনারায়ণকে প্রথমে আটক করা হয়। এরপর বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় । রামনারায়ণ মূলত শ্রম কর্মসংস্থানের খোঁজে কেরালায় গিয়েছিলেন।তিনি প্রদেশের পলাক্কাদ জেলায় গেলে তাকে প্রথমে চোর সন্দেহে মারধর করা হয়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা তার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপরই নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। পুলিশের মতে, তার কাছ থেকে কোনো চুরি যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়নি।
যেভাবে হত্যা করা হয় রামনারায়ণকে
ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে নির্মমভাবে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে । ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে রামনারায়ণের শরীরে ৮০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা মাথায় গুরুতর আঘাত, শরীরে একাধিক আঘাত এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ খোঁজে পেয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার সময় তার বুক থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে।
৩১ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, হামলাকারীরা রামনারায়ণকে বারবার ‘বাংলাদেশি’ বলে সম্বোধন করছে । এক পর্যায়ে, ভিডিওটি রেকর্ড করা একজন ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার ভাষা কী?’ এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তার গ্রাম কোথায়। রামনারায়ণ সঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার আগে তার আশেপাশের লোকেরা নিজেরাই বলে, ‘তুমি বাংলাদেশি।’
মারধরের কারণে জ্ঞান হারানোর পর, রামনারায়ণকে বলতে শোনা যায় যে তার বোন তার গ্রামে থাকে। ভিডিও রেকর্ড করা ব্যক্তি ঠাট্টা করে উত্তর দেয়, ‘তোমার বোন বাংলাদেশি।’ তা সত্ত্বেও হামলাকারীরা ‘তুমি বাংলাদেশি’ স্লোগান দিতে থাকে এবং রামনারায়ণের উপর নির্মম আক্রমণ করতে থাকে।
এ ব্যক্তির ওপর এতটাই নির্মমতা চালানো হয় যে হামলার সময় তার বুকের ভেতর থেকে রক্ত মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়।এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সবাই আত্তাপাল্লাম গ্রামের বাসিন্দা। ধৃতরা হলেন— মুরলি, প্রসাদ, অনু, বিপীন এবং আনন্দন। তাদের গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ নিশ্চিত করেছে, রামনারায়ণের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তার ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে আছে।তার খুড়তুতো ভাই শশীকান্ত বলেছেন, “রামনারায়ণ কাজ করতে কেরেলায় গিয়েছিল। বাংলাদেশি ভেবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি গরীব মানুষ ছিলেন। তার পরিবারকে সাহায্য করার কেউ নেই। খুবই ছোট ছোট দুটি বাচ্চা তার। আমি সরকারকে অনুরোধ করব তার পরিবারকে যেন সাহায্য করা হয়।”

