এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,৩০ জুন : দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের প্রেম ৷ প্রেমিকা পুলিশের কস্টেবল । নিজের শোবার ঘরের দেওয়াল জুড়ে টাঙানো বিভিন্ন পোজে তোলা ইউনিফর্ম পরা ও সাধারণ পোশাক পরা প্রেমিকার অসংখ্য ছবি । কিন্তু প্রেমিক ভিন রাজ্যে সেন্টারিংয়ের কাজ করতেন । বিধবা মা নিয়ে ছিল যুবকের অভাবের সংসার । আর তার অভাবই হয়ে গেল প্রেমের পরিণতির পথে অন্তরায় । প্রেমিকা যে তলায় তলায় অন্যত্র বিয়ের জন্য যোগাযোগ করছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বাগদা থানার মনোহরপুরের বছর ত্রিশের যুবক চিরঞ্জিৎ বৈরাগী । ভিন রাজ্য থেকেই খবর পান প্রেমিকা অন্যত্র বিয়ে করে নিয়েছেন । একথা শুনে আর থাকতে পারেননি চিরঞ্জিৎ । ছুটে আসেন বাড়িতে । কিন্তু প্রেমিকাকে ফিরে পাওয়ার সব আশা শেষ দেখে আজ বাড়ির পিছনের একটা গাছের ডালের সাথে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন ওই যুবক । আত্মহত্যার আগে তিনি ন’মাস আগের তোলা প্রেমিকার সঙ্গে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, “২০০৯ থেকে ২০২৫ এ রিলেশন শেষ করে দিলে” ।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় চরম ক্ষিপ্ত হন মনোহরপুরের বাসিন্দারা । ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী পাশের গ্রাম ভবানীপুরে চিরঞ্জিতের প্রেমিকা সরস্বতী দাসের বাড়ির সামনে মৃতদেহ রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখান । বাড়িতে ভাঙচুরেও অভিযোগ উঠেছে৷ পরে খবর পেয়ে বাগদা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।
একমাত্র সন্তানকে শোকে আকুল মা পূর্ণীমা বৈরাগী কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’ছেলেকে আমি আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম । মেয়েটা পুলিশে চাকরি করে । আর আমার ছেলে সামান্য সেন্টারিং এর কাজ করতো। আমি ছেলেকে বুঝিয়েছিলাম যে ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হলেও পেশার কারনে ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দেবে,তুই সুখি হবি না ।’ তিনি আরও বলেছেন,’একারণে ছেলের অন্যত্র বিয়ের জন্য যোগাযোগ করছিলাম । এক জায়গায় বিয়ের ঠিকও হয় । কিন্তু মেয়েটা হুমকি দেয় যে ছেলে সেখানে বিয়ে করলে সে আত্মহত্যা করবে । যেকারণে ছেলে আর বিয়ে করেনি । এদিকে মেয়েটা নিজেই অন্যত্র বিয়ে করে আমার ছেলেকে শেষ করে দিয়ে গেল । ও জীবনেও সুখি হবে না৷’
জানা গেছে,কর্মসূত্রে হায়দ্রাবাদে থাকতেন চিরঞ্জিৎ বৈরাগী । মাঝে মধ্যে বাড়ি আসতেন তিনি । বাড়িতে একাই থাকতেন তার বিধবা মা পূর্ণীমাদেবী । দিন দুয়েক আগে সরস্বতী দাসের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় । সেই খবর পেয়ে গতকাল রাত ১০ টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসেন চিরঞ্জিৎ । রাতে নিজের ঘরে শুয়ে প্রেমিকার সঙ্গে ফোনে ছেলে কথাও হয় বলে জানান মৃতের মা । আজ সকালে যুবককে তাদের বাড়ির পিছনে একটা গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তার মা । এই দৃশ্য দেখে মর্মস্পর্শী আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠেন প্রৌঢ়া পূর্ণীমাদেবী৷ প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন । তারাই দড়ি কেটে দেহটি নামান । প্রতিবেশী বধূ চায়না মণি বলেন,’ছেলেটাকে বিয়ে করতে দিল না । তারপরও মেয়েটা কি করে বিয়ে করল? আমরা চাই ওর বিচার হোক ৷’ যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এনিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।।