শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি,২৬ আগস্ট : বোনের বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে গেছে । বিয়েতে পন বাবদ কাঠের খাট, আলমারি প্রভৃতি দান সামগ্রী দেওয়ার কথা । তার কিছু কিছু তৈরি করে বাড়িতে এনে রেখেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের যুবক । বিগত কয়েক মাস ধরে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে বোনের বিয়ের প্রস্তুতি আর বাজারে দেনা শোধের জন্য অল্প অল্প করে টাকাও জমাচ্ছিলেন তিনি । কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সব কিছু ভস্মীভূত হয়ে গেল । সর্বস্ব হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারী শহরের পারিজাতনগর উদয়পল্লীর বাসিন্দা বলাই গোলদার নামে ওই যুবক ।
পারিজাতনগর উদয়পল্লী পশ্চিমপাড়ায় বাড়ি বলাই গোলদারের । বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী,নাবালক এক সন্তান আর অবিবাহিত এক বোন । করগেটের ছাউনি দেওয়া ঘরে বসবাস । মেলায় দোকান চালিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালান তিনি । বলাইবাবু বলেন, ‘আমার বোনের বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে গেছে । বিয়েতে দেওয়ার জন্য একটি কাঠের খাট,স্টীলের আলমারি ও অল্পবিস্তর কাঁসা পিতলের বাসনপত্র কিনে বাড়িতে মজুত করে রেখেছিলাম । এছাড়া বাজারে আমার কিছু দেনাও আছে । তা পরিশোধের জন্য বিগত দু’মাস ধরে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছি । তিল তিল করে ৫০,০০০ টাকা জমিয়েও ছিলাম । কিন্তু বৃহস্পতিবার আগুনে সব শেষ করে দিল । এখন বোনের বিয়ে কিভাবে দেবো,দেনা কিভাবে শোধ করবো জানিনা ।’
জানা গেছে,বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা প্রায় সাতটা নাগাদ বলাই গোলদারের বাড়ির এক কোনে হঠাৎ কোনো ভাবে আগুন ধরে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে । সেই সময় ঘরের বাইরে সন্তানকে নিয়ে বসেছিলেন বলাইবাবুর স্ত্রী । এদিকে নিমেষের মধ্যে গোটা বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে । গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটলে তা ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে । স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান । খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলবাহিনীকে ।
স্থানীয় বাসিন্দা অভিজিৎ মণ্ডল, মনোজ মণ্ডলরা বলেন, ‘আমরা ৭ টা ১৫ মিনিট নাগাদ দমকল অফিসে ফোন করি । কিন্তু ওরা আসে প্রায় দেড় ঘন্টা পর সাড়ে ৮ টা নাগাদ । যদিও ততক্ষণে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসি । দেরি হওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করলে দমকলবাহিনীর তরফ থেকে বলা হয় রেলওয়ে লেবেল ক্রসিংয়ে তাদের গাড়ি আটকে গিয়েছিল ।’ এনিয়ে তাঁরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন । পাশাপাশি এলাকার মধ্যে দমকলের একটি ইঞ্জিন সর্বদা মজুত রেখে দেওয়ার জন্য তাঁরা দাবিও জানান ।।