এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যায় পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়ল ও মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কোনো কথাতেই আস্থা রাখতে পারছে না কেউ । আজ মমতা ব্যানার্জি সিপি বিনীত গোয়েলকে পাশে রেখে তদন্ত প্রক্রিয়া আগামী ৭ দিনের মধ্যে শেষ করা ডেডলাইন দিয়েছেন । আর এতেই মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে । অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, ‘মমতা ব্যানার্জি আদপেই কি চাইছেন যে আরজি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণ হত্যায় যুক্ত প্রকৃত আসামিদের সাজা হোক ?’ কারোর বক্তব্য যে আসলে সময় নষ্ট করতেই মুখ্যমন্ত্রী সিপি বিনীত গোয়েলকে পরিকল্পিত ভাবে সময় বেঁধে দিয়েছেন যাতে সিবিআইয়ের হাতে কোনো প্রমান না আসে৷
তবে কারন যাই হোক না কেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল একটা চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন । তার দাবি, আরজি কর মেডিকেল কলেজের তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণ হত্যায় যুক্ত খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদের ভাগনা । আজ সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,’এটা আশ্চর্যজনক যে কি করে মমতা ব্যানার্জী এতটা নিশ্চিত হতে পারে যে তার পুলিশ রবিবারের মধ্যে এই মামলাটি সমাধান করতে পারবে? তিনি কি জ্যোতিষশাস্ত্রীয় শক্তির উপর নির্ভর করছেন, নাকি অন্য কিছু আছে? ধর্ষণ এবং নৃশংস হত্যার যে জঘন্য অপরাধ ঘটেছে,তা সমাধানের জন্য কি মুখ্যমন্ত্রী কি আদেও ভাবছে ? নাকি আসলে তিনি কাউকে আড়াল চেষ্টা করছেন?’
এরপর তিনি দাবি করেন,’আরজি কর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে,সেখানে উল্লেখ রয়েছে যে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার সাথে তৃণমূল সাংসদের ভাগ্নে সরাসরি জড়িত । সন্দেহজনকভাবে, সেই দিনে ডাঃ মাজি দুই ঘন্টা ডিউটিতে ছিলেন—এর পিছনে আসল স্বার্থ এবং উদ্দেশ্য কী ছিল? আমরা এই সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চাই।’
তিনি বলেন,’আমি জানতে চাই যে বিনীত গোয়েল তার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরে এবং তিনি যে মিথ্যা ছড়িয়েছেন তার পরে তিনি কি পদত্যাগ করবেন? পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটি একটি আত্মহত্যা বলে দাবি করেছিল, কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এটি একটি ধর্ষণ ও খুন বলে উল্লেখ রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় পুলিশ প্রথমে মিথ্যা বলে।এর থেকে এটাই স্পষ্ট যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, পুলিশ পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কীভাবে এই ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে তার এটি আরেকটি উদাহরণ। তদন্তে গাফিলতি করা এবং নিজেদের রক্ষা করার জন্য তৃণমূল সরকার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা করছে। এই সরকার প্রতিনিয়ত দেখিয়েছে যে তারা নির্যাতিতদের বিচারের চেয়ে সত্য ধামাচাপা দিতে বেশি আগ্রহী।’
তিনি মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে বলেন,’পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আর কত বোকা বানাবেন মুখ্যমন্ত্রী?সত্য সামনে আসবে।আসল সত্য বাংলার মানুষ জানতে চায়।আসল অপরাধীদের গ্রেফতার ও দোষীদের সাজা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’
এদিকে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ঘটনার নৈতিক দায় নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন। যার বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ, সেই অধ্যক্ষকে প্রায় ক্লিনচিটই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আজ সোমবার পানিহাটিতে নির্যাতিতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মমতা জানান, মানসিক চাপে পদত্যাগ করা অধ্যক্ষকে অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে । তিনি বলেন,’আর জি করের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন দিনকয়েক ধরে তিনি নিজে ও তাঁর সন্তানেরা মানসিক চাপে রয়েছেন। তাই আজ সকালে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আমরা তাঁকে বুঝিয়ে বলেছি। আপনাকে ওখানে কাজ করতে হবে না। অন্যত্র কাজ করবেন।’
এদিকে যাকে ঘিরে অভিযোগের পাহাড়, সেই সন্দীপ ঘোষের প্রতি মমতা ব্যানার্জির গলায় এই প্রকার ‘সহানুভুতি’র সুর শুনে অনেকে মন্তব্য করছেন যে তার পার্টির অনুগত ভক্ত হওয়াতেই বারবার তাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে বা হচ্ছে ৷ যদিও সন্দীপ ঘোষকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে মেনে নিতে পারছে না পডুয়ারা । আজ সন্ধ্যা থেকেই ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ চত্বরে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁরা । অধ্যক্ষের জন্য নির্ধারিত ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । পড়ুয়ারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে কোনও অবস্থাতেই তাঁরা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপ ঘোষকে মেনে নেবেন না ।।