এইদিন ওয়েবডেস্ক,খাগড়াছড়ি(বাংলাদেশ),১৭ আগস্ট : হাটে তখন প্রচুর মানুষ । সকলেই কেনাকাটায় ব্যস্ত । এদিকে এক প্রান্তে ময়লা চিকুটি পোশাক পরা হাড় জিরজিরে এক আদিবাসী মহিলা সমানে হেঁকে যাচ্ছেন- ‘ছেলে কিনবেন গো,ব্যাটা ছেলে ।’ বছর ছয়েকের এক শিশু তখন মহিলাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে । এরই মাঝে দু’একজন ক্রেতা গিয়ে শিশুটির মূল্য জানতে চায় । মহিলা জানায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি মূদ্রায় ছেলেটিকে তিনি বিক্রি করে দিতে চান । কেউ কেউ শিশুটিকে কেনার জন্য ৫-৬ হাজার টাকা দরও দেন । অভাবের তাড়নায় নিজের গর্ভজাত সন্তানকে বিক্রি করার চেষ্টার এহেন মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে । বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার পার্বত্য অঞ্চল ভাইবোনছড়ি উপজেলার পাকুজ্যাছড়ি গ্রামে বসবাসকারী আদিবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কি অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সোনালী চাকমা নামে বছর ত্রিশের ওই মহিলা ।
জানা গেছে,পাকুজ্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা সোনালী চাকমা ছেলের জন্মের অব্যবহিত পড়েই স্বামী তাঁদের ছেড়ে পালিয়ে যায় । গ্রামের এক প্রান্তে একটি কুঁড়ে ঘরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে থাকেন ওই মহিলা । নিজে পক্ষাঘাতগ্রস্ত । ওই অবস্থাতেই খেত মজুরের কাজ করে কোনো রকমে দু’জনের একবেলার খাবার জোটাচ্ছিলেন । কিন্তু চিকিৎসার অভাবে আস্তে আস্তে শরীরের একটা দিক কার্যত অকেজো হয়ে যায় । তাই বিগত কয়েক দিন ধরে আর বিশেষ কাজকর্ম করতে পারছিলেন না । ফলে অনাহারে কাটছিল মা ও ছেলের । এদিকে একমাত্র ঘরের চালও ফুটো হয়ে গেছে । বর্ষার বৃষ্টিপাতের জল ঢুকছে ঘরে । সোনালী চাকমা বলেন, ‘আমি অক্ষম হয়ে গেছি । ছেলেকে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে দিতে পারছি না । একমাত্র আশ্রয়স্থলটাও ভেঙে পড়ার মুখে । তাই ভেবেছিলাম ছেলেকে হাটে গিয়ে বিক্রি করে দেবো । যে কিনবে সে অন্তত আমার ছেলেকে দু’বেলা খেতে তো দেবে । এদিকে ওই টাকায় ঘরটা মেরামতিও করতে পারবো ।’
জানা গেছে,নিজের সন্তানকে বিক্রি করার জন্য গত ১১ই আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা সদর বাজারে গিয়েছিলেন সোনালী চাকমা । ১৫ হাজার বাংলাদেশি মূদ্রায় নিজের সন্তানকে বিক্রি করার চেষ্টা করতে থাকেন তিনি । কয়েকজন ক্রেতা শিশুটিকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে । চলে দরাদরি । এদিকে ঘটনার জেরে শোড়গোল পড়ে যায় এলাকায় । খবর যায় প্রশাসনের কাছে। ছুটে আসেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা । তারা মহিলাকে সর্বোতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন । শেষে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সোনালী চাকমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তাঁরা । কয়েকজন সহৃদয় মানুষ মহিলার হাতে কিছু সাহায্যও তুলে দেয় । এদিকে এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেছে বাংলাদেশ সরকার । বাস্তব ঘটনা আড়াল করতে এখন ওই আদিবাসী মহিলাকে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমান করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠছে ।।
তথ্যসূত্র ও ছবি : হিন্দু ভয়েস ।