সুজয় কর,বাগনান(হাওড়া),১১ জুন : আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও মনের অদম্য ইচ্ছে যে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে তার প্রমাণ রাখল সদ্য কুড়ি অতিক্রম করা হাওড়ার বাগনান কলেজের তৃতীয় বছরের ছাত্রী পৌলভী মিশ্র। নিজের জন্মদিনে শতাধিক গাছের চারা তুলে দেয় বাগনান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচিকাচাদের হাতে। পাশাপাশি তাদের সবার হাতে চকলেটও তুলে দেয়।
আজ মঙ্গলবার ছিল পৌলভীর জন্মদিন। আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে জন্মদিনে কেক কেটে হৈ হুল্লোড় করার মত আর্থিক সামর্থ্য বাগনানের মাধবপুর গ্রামের মিশ্র দম্পতি মহিতোষ বাবু ও ছন্দা দেবীর নাই। নিজের গৃহশিক্ষকতা ও ‘গাছ কাকু’ চন্দ্রনাথ বসুর অনুষ্ঠান থেকে উপার্জিত অর্থ অপচয় না করে নিজের জন্মদিনে পৌলভী স্থানীয় একটি নার্সারি থেকে কিনে ফেলে শতাধিক চারাগাছ। তারপর বাগনান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতিতে সেগুলি তুলে দেয় কচিকাচাদের হাতে এবং রোপণ করা ও যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দেয়। প্রসঙ্গত, সংখ্যায় কম হলেও গতবছরও নিজের জন্মদিনে পৌলভী একইভাবে গাছের চারা বিতরণ করে।
মেয়ের এই কাজের জন্য গর্বিত বাবা মহিতোষবাবু বললেন,’মেয়ের এই ছোট্ট হৃদয়ে এতবড় একটা মন লুকিয়ে আছে সেটা আগেই টের পেয়েছিলাম। ওর সমবয়সীদের একটা অংশ যখন জন্মদিনের আনন্দে মেতে ওঠে আমার মেয়ে তখন পরিবেশের কথা ভাবছে। আবেগে গলা ধরে আসার জন্য মা ছন্দা দেবী কিছু বলতে না পারলেও নবম শ্রেণির ছাত্রী ছোট বোন প্রীতি বলে উঠল – আমিও বড় হয়ে দিদির মত চারাগাছ বিতরণ করব।’
পৌলভীর ভূয়সী প্রশংসা করে হলদিয়ার বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা শিক্ষক অরিন্দম দাস বললেন, ‘বিলাসিতায় না মেতে ওর বয়সী ছেলেমেয়েরা যত বেশি এগিয়ে আসবে পরিবেশ তত দ্রুত দূষণ মুক্ত হবে এবং ভয়াবহ তাপপ্রবাহের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব। প্রসঙ্গত, রাজ্যজুড়ে দশ লক্ষ বৃক্ষরোপণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে অরিন্দম বাবুর সংস্থা। ইতিমধ্যে তারা কাজ শুরু করেও দিয়েছে।’ লাজুক হেসে পৌলভী বললেন,’দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশবিদরা বলে চলেছেন দূষণ ও এই তীব্র তাপপ্রবাহের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় বৃক্ষরোপণ। অপরের উপর দায়িত্ব না চাপিয়ে দিয়ে আমরা নিজেরাই যদি এগিয়ে আসি তাহলে সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।’ নির্বিদ্বিধায় পৌলভী জানান যে চারাগাছ বিলির প্রেরণা তিনি তার ‘গাছ কাকু’ চন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে পেয়েছেন ।।