প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ নভেম্বর : পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস প্লাসের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে তৃণমূল বিধায়কের মা ,শাশুড়ি ও তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধানের নাম । আর তা নিয়েই এখন তোলপাড় পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে। নড়েচড়ে বসেছে ব্লক প্রশাসন। বিষয়টি জানার পর জেলা শাসক আয়েশা রানী স্পষ্ট করে দিয়েছেন,’কোন ব্যক্তি কি পদে আছে,সেটা বিবেচ্য বিষয় হবে না। যেখানে অভিযোগ আছে ,সেখানেই ’সুপার চেকিং’ হচ্ছে । কারোর পাকা বাড়ি থাকলে তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে’।
খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়ায়। সেখানেই বিধায়কের শাশুড়ি এবং শ্যালকরা বসবাস করেন। তাঁদের পাকা দোতালা বাড়ি থাকলেও বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায়ের নাম আবাসের তালিকায় জায়গা পেয়েছে । শুধু শাশুড়ি মা নয়, বিধায়কের নিজের মা নন্দরাণী বাগের নামও জায়গা করে নিয়েছে আবাস প্লাসের তালিকায়। যা সম্প্রতি জানাজানি হয়ে যায়।তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁষতে থাকেন এলাকার লোকজন।
ক্ষোভ বিক্ষোভের বিষয়টি জানতে পেরেই ’সুপার চেকিংয়ে’ নেমে পড়েছে ব্লক প্রশাসন। এ ব্যাপারে বিধায়কের শাশুড়ি তাঁর সাফাইয়ে বলেন,’যখন আমাদের বাড়ি ছিলনা তখন আবাসের বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। এখন আমার ছেলেরা পাকা বাড়ি করেছে।আমার দুই ছেলে ওই পাকা বাড়িতে থাকলেও আমি মাটির বাড়িতেই থাকি।’যদিও বিধায়কের এক শ্যালক বলেন,’আমরা নাম বাদ দেবার আবেদন করবো।’
তবে অনেক চেষ্টা করেও এনিয়ে বিধায়কে মা নন্দরাণী বাগের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। এদিকে এমন কাণ্ডে বেজায় ফেঁসাদে পড়ে গিয়েছেন বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগ। তিনি তাঁর মায়ের নাম আবাসের তালিকায় থাকা নিয়ে কিছু না বললেও শাশুড়ির নাম আবাসের তালিকায় থাকার কোন দায় নিতে চান নি। ক্ষুব্ধ ভাবেই তিনি জানিয়ে দেন,’আমার সঙ্গে আমার শ্বশুর বাড়ির কোন সম্পর্ক নাই। আইনে যা হবে তাই হবে।’
শুধু বিধায়কের মা কিংবা শাশুড়ি’ই নয় ,তৃণমূল পরিচালিত খণ্ডঘোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মালতি সাঁতরার নামও আবাস প্লাসের তালিকায় রয়েছে।মালতিদেবীর স্বামী হারু সাঁতরা খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতের পূর্বতন বোর্ডের প্রধান ছিলেন। সেই সময় গীতাঞ্জলি প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পেয়ে তিনি পাকা বাড়ি করেন। এখন নতুন যে আবাসের তালিকা প্রকাশ হয়েছে তাতে প্রধান মালতি দেবীর নাম জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক শিবির।
এ নিয়ে প্রধান মালতি সাঁতরাকে জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন,’২০২২ সালে যে সার্ভে হয়েছিল তাতে তাঁদের নাম ছিল না। তা সত্ত্বেও নতুন তালিকায় কি করে তাঁদের নাম উঠল সেটা তাঁদেরও প্রশ্ন।’ সেই প্রশ্নেই এখন মহা ফাঁপড়ে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রধান মালতি সাঁতরা এও বলেন,’আমার স্বামী যখন প্রধান ছিল না তখন পার্টি থেকে আমাদের গীতাঞ্জলি প্রকল্পের ঘর দিয়েছিলো। এখন আমর বাড়ি আছে, আমি আবাসের বাড়ি নেবো না। আমার নামের বাড়ি অন্য কেউ পাক সেটাই আমি চাই’।মিতালী দেবীর স্বামী হারু সাঁতরা বর্তমানে খণ্ডঘোষ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি । তিনিও দাবি করেন,’আবাসের বাড়ির জন্য আমি আবেদনই করিনি ।তবুও কি করে নাম উঠলো আমি জানিনা। বিষয়টি জানতে পেরেই আমি বিডিওর কাছে নাম বাদ দেবার জন্য আবেদন করি।’
বিষয়টি নিয়ে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি
মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’আবাসে অস্বচ্ছতা এবারেও যে কাটেনি।এইসব ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে,
গরিবরা নয়,তৃণমূলের রাজত্বে তৃণমূলীরাই ভোগ করবে আবাসের ঘর। তাই আবাসের তালিকায় তৃণমূল বিধায়কের মা,শাশুড়ি এবং তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের নাম জায়গা করে নিয়েছে।’
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,’ভুল ভ্রান্তি হয়তো কিছু রয়েছে ।তার জন্যই তো এখনও সার্ভে হচ্ছে।।