এইদিন ওয়েবডেস্ক,ময়মনসিংহ,১৬ জুলাই : প্রখ্যাত চলচিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি রয়েছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ৷ সেই শতবর্ষী জরাজীর্ণ বাড়িটি সংস্কার করা তো দুরের কথা,সেটি ভেঙে নতুন শিশু একাডেমি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ইসলামি মৌলবাদী মহম্মদ ইউনূসের সরকার । যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে ভারত ও বাংলাদেশে ।
ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় রোডে অবস্থিত প্রায় ২০০ বছরের পুরনো প্রাচীন বাড়িটি—যা সত্যজিৎ রায়ের বিশিষ্ট পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায়-এর অবলম্বন—বর্ধিষ্ণু শিশু একাডেমির হেফাজতে ছিল। এই বাড়িটি ১৯৮৯ থেকে শিশু একাডেমির জেলা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে ২০০৭ সালের পর থেকে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটির বিষয়ে অসন্তোষ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই বিষয়ে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, যদিও বাড়িটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত হয়নি, তবে “জরিপে দেখা যাচ্ছে এটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে উপযোগী”—এজন্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল । স্থানীয় শিশু একাডেমির জেলা কর্মকর্তা মহম্মদ মেহেদী জামান বলেন, “২০০৭-এর পর থেকে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় মেরামতের চেষ্টা করেও ঝুঁকির কথা বিবেচনায় এটি ভেঙে নতুন আধাপাকা ভবন নির্মাণ এবং পরবর্তীতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত” ।
তবে স্থাপত্যজ্ঞ ও গবেষক স্বপন ধর বলছেন, “স্থাপত্য দেখে বোঝা যায় এটি ১৭৮৭ সালের পর নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভবন। এখনই মূল আদলে রক্ষা করা সম্ভব না হলেও ‘ঐতিহাসিক ছাপ’ ধরে রেখে পুনঃনির্মাণের সুযোগ ছিল”। এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে একটি আলোচনায় পথ খুলেছে—কীভাবে আমাদের ঐতিহ্যগত স্থাপনাগুলো সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত রেখে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা টেকে, সেটি কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করা যায়।
এদিকে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইট করেছেন,’খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত। এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।’।