কংগ্রেসের ‘যুবরাজ’ রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস কেন বারবার বলে যে মোদী সরকার সিবিআইয়ের অপব্যবহার করছে, কারণ কংগ্রেসের নিজেরই সিবিআইয়ের অপব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে । এই বিষয়ে এত নোংরা রেকর্ড আছে যা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন । ঘটনাটি ১৯৮৩ সালে বিহারের । বিহার এবং কেন্দ্র উভয় স্থানেই কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জগন্নাথ মিশ্র। আর ইন্দিরা গান্ধী কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ।
সেই সময় বিহার আইন পরিষদের চেয়ারপার্সন ছিলেন রাজেশ্বরী সরোজ দাস। তিনি একটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। মেয়েটির নাম ছিল শ্বেতনিশা । তবে রাজেশ্বরী সরোজ দাস কখনোই প্রকাশ করেনি যে মেয়েটির আসল বাবা-মা কে। মেয়েটি অপূর্ব সুন্দর ছিল। রাজেশ্বরী সরোজ দাস তার প্রভাব ব্যবহার করে তার দত্তক কন্যাকে বিহার বিধানসভায় টেলিফোন অপারেটর বানিয়েছিলেন।
শ্বেত নিশা ত্রিবেদী এত সুন্দরী ছিলেন যে বিধানসভার সকল বিধায়ক তাকে ‘ববি‘ বলে ডাকত । কারণ একই সময়ে রাজ কাপুরের সিনেমা “ববি” মুক্তি পেয়েছিল এবং সে “ববি” সিনেমার ডিম্পল কাপাডিয়ার মতোই সুন্দরী ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই, শ্বেতনিষা ত্রিবেদী ক্ষমতার করিডোরে একটি বড় নাম হয়ে ওঠেন।কোনও পদোন্নতি ছাড়াই তাকে সরাসরি প্রধান কেরানির পদ দেওয়া হয়। অনেক বিধায়ক ছিলেন, যখনই তাদের পুরো ভাতার বিল অনুমোদনের জন্য তাঁর কাছে আসত, তখনই তারা তাকে উপঢৌকন দিত ।স্বেতানিশা ত্রিবেদী এমনকি আইএএস অফিসারদেরও বদলি করাতেন ।
তারপর একদিন শোনা গেল যে-শ্বেতানিশা ত্রিবেদী আর এই পৃথিবীতে নেই,মারা গেছেন । বিহারের সমস্ত সংবাদপত্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে কেউ ববি ওরফে শ্বেতনিশা ত্রিবেদীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করবে না। সেই সময়, আইপিএস কিশোর কুণাল পাটনার এসএসপি ছিলেন। যখন তিনি জানতে পারল যে ববি ওরফে শ্বেত নিশা ত্রিবেদী হঠাৎ মারা গেছে তার সন্দেহ হয় । তিনি তৎক্ষণাৎ তার পালিত মায়ের কাছে যান। তখন মা জানালেন যে তার দত্তক কন্যা অসুস্থ হয়ে মারা গেছে । আর যেহেতু সে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল তাই তাকে পাটনার খ্রিস্টান কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে ।
তাৎক্ষণিকভাবে, এসএসপি কিশোর কুণাল আদালতের আদেশ গ্রহণ করেন এবং ববি ওরফে শ্বেত নিশা ত্রিবেদীর মৃতদেহ কবর থেকে বের করেন এবং পচাগলা দেহের ময়নাতদন্ত করেন। মৃতদেহের ময়নাতদন্তে জানা যায় যে- ববির গর্ভে ৩ মাস বয়সী একটি ভ্রূণ ছিল এবং ম্যালাথিয়ন নামক বিষের প্রভাবে তিনি মারা গেছেন । এরপর এসএসপি কিশোর কুণাল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের কাছ থেকে ফোন পান । মুখ্যমন্ত্রী এই মামলার ফাইল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন । কিন্তু কিশোর কুণাল তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, স্যার, এই মৃত্যু সন্দেহজনক, আমি এটি তদন্ত করব। তিনি তদন্ত চালিয়ে যান ।
কিশোর কুণাল একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে শ্বেত নিশা ত্রিবেদী ওরফে ববির মায়ের চেয়ারের নিচে রেখে আসেন৷ এটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছিল যাতে তিনি জানতে না পারেন যে তার চেয়ারের নীচে একটি টেপ রেকর্ডার রয়েছে । এরপর কিশোর কুণাল অফিসে গিয়ে তাকে আবেগগতভাবে প্রভাবিত করেছিলেন । তিনি জিজ্ঞাসা করেন,’কেমন মা আপনি ? এখন আপনি অবসর নিয়েছেন । এই বৃদ্ধ বয়সে আপনার মেয়ের মৃত্যুর সত্যটা বলা উচিত। যাতে আপনার পরের জন্ম উন্নত হয়।’ একথা শুনে শ্বেতা ত্রিবেদীর মা কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন,’মেয়ে আমার কোনো কথা শুনত না। অনেক মন্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক ছিল এবং ৫০ জনেরও বেশি বিধায়ক যখনই ইচ্ছা তাকে তাদের বাংলোয় ডেকে পাঠাত ।’ তারপর তিনি বললেন যে বিহার বিধানসভার স্পিকার এবং কংগ্রেস নেতা রাধা নন্দন ঝা-এর ছেলে রঘুবর ঝা পাউডারের মতো জিনিস এনেছিল । রঘুবর ববি শ্বেত নিশা ত্রিবেদীকে বললো যে এটা তোমার ওষুধ, এটা খাও। ওষুধ খাওয়ার সাথে সাথেই তার স্বাস্থ্যের তীব্র অবনতি ঘটে। রঘুবর ঝা তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে ববি মারা যায় ।
একথা শুনে কিশোর কুণাল সেই হাসপাতালে গেলেন যেখানে ববিকে ভর্তি করা হয়েছিল । ডাক্তাররা বললেন যে তারা তার ময়নাতদন্ত করেছেন । কিন্তু কিশোর কুণাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখলেন, তখন তিনি অবাক হয়ে গেলেন যে দুটি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। একটা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা ছিল যে শ্বেত নিশা ত্রিবেদীর মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা ছিল যে বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে। বিষের কারণে তীব্র অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়, যার ফলে তার অঙ্গগুলি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ডাঃ কে কে ঝা-এর একটি মৃত্যু সনদে বলা হয়েছে যে তিনি অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা গেছেন, অন্যদিকে পাটনার একজন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ কে ঠাকুরের অন্য একটিতে বলা হয়েছে যে ববি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে বিহারে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ববি ওরফে শ্বেত নিশা ত্রিবেদীর মৃত্যুর তদন্ত চলছে। কিশোর কুণাল অত্যন্ত সততার সাথে তদন্ত করছেন।তখন বিহারের ৪৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক এবং বিহারের তিনজন মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রকে হুঁশিয়ারি দিল যে এসএসপির কাছ থেকে এই তদন্তটি নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে দেওয়া উচিত, নাহলে আমরা আপনার সরকার ভেঙে দেব । বিহারের বিধায়করা জগন্নাথ মিশ্রকে বলেন যে আপনার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলা উচিত যে আমরা সিবিআই ক্লোজার রিপোর্ট তৈরি করব। সিবিআই কর্মকর্তাদের কেবল এটিতে স্বাক্ষর করতে হবে, তদন্ত নয় ।
এরপর একদিন হঠাৎ করেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রেস নোট জারি করেন যে ববি ওরফে শ্বেতা নিশা ত্রিবেদীর হত্যার তদন্ত বিহার পুলিশ থেকে সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ৪ দিন পর সিবিআই ক্লোজার রিপোর্ট দেয় । সিবিআই ক্লোজার রিপোর্টে লিখেছে যে ববি ওরফে শ্বেত নিশা ত্রিবেদী একটি ছেলের প্রেমে পড়েছিলেন এবং প্রেমে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে এই মামলার তদন্তের জন্য কোনও সিবিআই অফিসার বিহারে আসেননি। এই মামলায় কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।এমনকি ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
এই কারণেই এই কংগ্রেসীরা বারবার বলে যে মোদী সরকার সিবিআইয়ের অপব্যবহার করছে কারণ এই কংগ্রেসীরা তাদের পাপ এবং অপকর্মের কথা মনে রাখে। এসএসপি কিশোর কুণাল পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, সেই সময় আদালতে কোনও পিআইএল ব্যবস্থা ছিল না, অন্যথায় আমি এই বিষয়ে পিআইএল দায়ের করতাম। সেই সময়, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট… সবকিছুই কংগ্রেস সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল । পরে, যখন জনস্বার্থ মামলা (PIL) ব্যবস্থা তৈরি করা হয়, তখন তিনি নিজেই এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। এরপর আদালত বলে যে এই ক্ষেত্রে কেবল ববির পরিবারের সদস্যরাই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে পারবেন এবং ববির মা ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। তার পরিবারের এমন কোনও সদস্য ছিল না যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে পারত। এইভাবে ব্যাপারটা চিরতরে ধামাচাপা পড়ে যায় ৷ কংগ্রেসের নেতাদের ঘৃণ্য চেহেরাও মানুষ জানতে পারেনি কখনো ।
যদি আমরা সিবিআইয়ের অপব্যবহারের ঘটনাগুলি লিখতে শুরু করি, তাহলে কংগ্রেসের শাসনকালে কমপক্ষে এমন ৮,০০০ ঘটনা বেরিয়ে আসবে । যেখানে সত্য, ন্যায়বিচার, আইন-শৃঙ্খলাকে সিবিআইয়ের মাধ্যমে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল এবং কবর দেওয়া হয়েছিল। সন্দেহভাজন কাকা কোয়াত্রোচ্চির মতো দুর্নীতিবাজ অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য কংগ্রেস কীভাবে প্রকাশ্যে সিবিআইকে তাদের পোষ্য বানিয়েছিল, তার অপব্যবহার করেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়ত অনেকেই পড়েছেন । সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে কংগ্রেসের ‘তোতাপাখি’ বলে অভিহিত করেছিল । এখন যখন কংগ্রেস বর্তমান সরকারকে সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ করে, তখন মনে হয় যেন সানি লিওন ব্রহ্মচর্যের শিক্ষা দিচ্ছেন।।