এইদিন ওয়েবডেস্ক,দক্ষিণ দিনাজপুর,২৫ জুলাই : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে একে পর এক হিন্দু শিক্ষককে কট্টরপন্থীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে । নৃসংশ খুন,জুতোর মালা পডিয়ে ঘোরানো কিছুই বাদ যায়নি । এবার শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও । অভিযোগ, এক মুসলিম ছাত্রীর কান ধরে শাসন করার সময় তার হিজাব খুলে যাওয়ায় ছাত্রীর পরিবারের সদস্যসহ প্রচুর মানুষ স্কুলের কমনরুমে ঢুকে শিক্ষিকাকে চুড়ান্ত হেনস্থা করে । তাঁর কাপড় পর্যন্ত ছিঁড়ে দেয় । শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ঘটনার একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করে বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি তরুণজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন, ‘একজন মুসলিম ছাত্রীকে বকাঝকা করায় একজন শিক্ষিকাকে শিশুটির বাবা-মা এবং অন্যরা নির্মমভাবে লাঞ্ছিত করেছে । একজন শিক্ষককে নগ্ন করে বেধড়ক মারধর করা হয়। হিলি থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ দিনাজপুর পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অনুগ্রহ করে পদক্ষেপ নিন ।’
তাঁর অভিযোগ, ‘আমিও একসময় শিক্ষক ছিলাম। আমরাও ছাত্রদের শাসন করতাম। একজন শিক্ষকের কাছে তার ছাত্র কেবলমাত্র একজন শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কিছু নয়। শিক্ষিকা মেয়েটির কান ধরেছিলেন এবং এ সময় তার হিজাব খুুলে যায় । আর এই কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে ।’ তিনি বলেন, ‘এই ছোট্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২০০ জন লোকজন এনে স্কুলে হামলা চালায় । এই ঘটনায় প্রথমে থানায় মামলাও করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদে সরব হলে মামলা দায়ের করা হয় । পুলিশ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে ।’
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,ওই মুসলিম ছাত্রীটি বৃহস্পতিবার ক্লাসে আসেনি । পরের দিন ক্লাসে এলে তাকে বকাঝকা করে চড় মারেন আক্রান্ত শিক্ষিকা । মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনার কথা জানিয়ে দেয় । আর এরপর বিকেল নাগাদ ছাত্রীটির পরিবারের সদস্যরা বেশ কিছু লোকজন সঙ্গে এনে স্কুলের শিক্ষকদের কমনরুমে ঢুকে শিক্ষকদের মারধর ও গালিগালাজও করে বলে অভিযোগ । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় হিলি থানার পুলিশ । পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রবিবার ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে বলে জানা গেছে ।
রবিবার একটি সভায় বক্তব্য রাখার সময় ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘পুলিশের নিজে থেকে একটা মামলা করার ক্ষমতা নেই । এখুনি বলুন ট্রাক যাবে,পয়সা নিতে হবে, পুলিশ লাফাতে লাফাতে চলে আসবে । এদিকে ২০০ জন লোক একজন দিদিমনিকে ঘিরে ধরে পোশাক খুলে বিবস্ত্র করে দিল, পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে নপুংসের মত হাততালি দিচ্ছিল আর কোনো কাজ করছিল না । পরে যখন হাজার হাজার শিক্ষক শিক্ষার্থী,প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমে শ্রীময়িতে অবরোধ করল তখন এফআইআর রজু হল । তাও পুলিশ নিজে করেনি, কেউ অভিযোগ করলে এফআইআর হয়েছে । আর যারা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন তাঁদের ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রজু করেছে । এই হচ্ছে দিদিমনির পুলিশ । এই হচ্ছে এরাজের পুলিশের ক্ষমতা ।’
অন্যদিকে লাঞ্ছনার শিকার ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাসে শৃঙ্খলা না মানলে বা পড়ালেখায় মনোযোগ না দিলে আমরা তাদের কান মলে দিই বা কখনো সখনো চড় মারি। এটা করা হয় শৃঙ্খলার জন্য । এখন এই ঘটনার পর আমরা নিরাপত্তাহীন বোধ করছি ।’ পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘স্কুলের দুই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এই ঘটনার পর আমরা কীভাবে তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করব ?’