এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩১ ডিসেম্বর : সেই লোকসভার ভোটের পর শুরু । তারপর দু’জনের কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ । মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান -দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে পাঠানোয় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ । হেরে যাওয়ার পর ক্ষোভ চাপা থাকেনি তার । প্রকাশ্যে বহুবার “কাঠিবাজি” র কথা বলেছিলেন৷ নাম না করলেও তার ইঙ্গিতটা সে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকেই ছিল সেটা কারোর বুঝতে বাকি ছিল না । দিলীপ অনুগামীরা কার্যত খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে শুভেন্দুর প্রতি । তারপর ভাগিরথীতে অনেক জল বয়ে গেছে । কার্যত একঘরে হয়ে যান দিলীপ ঘোষ । দলের কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হচ্ছিল না তাকে । কিন্তু তারপরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়নি । ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোটের আগে রাজ্য বিজেপির দুই স্তম্ভের মধ্যে এহেন বিবাদ দলের হাইকম্যান্ডেরও মাথাব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল । অবশেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের এন্ট্রিতে পরিস্থিতি বদলেছে বলে মনে হচ্ছে ।
বঙ্গ সফরের আজ দ্বিতীয় দিনে সায়েন্স সিটিতে কলকাতা মহানগর কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ। ডাক পেয়েছিলেন দিলীপ ঘোষও । অমিত শাহ পৃথকভাবে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন । যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে কিছু খোলসা করেননি দিলীপবাবু ৷ খালি বলেছেন, “শুধু শুনে গেছি৷”
কিন্তু দিলীপ ঘোষের ফেসবুক পেজে দেখা গেছে যে আজকের সায়েন্স সিটিতে কলকাতা মহানগর কর্মী সম্মেলনের দুটি ছবি পোস্ট করেছেন । একটিতে তাকে সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলির সাথে দেখা গেছে । অন্যটি অমিত শাহকে শুভেন্দু অধিকারীর সংবর্ধনা জানানোর ছবি । আর এই ছবি দেখেই অনেকে মন্তব্য করছেন যে “শাহ টনিকেই সম্পর্কের বরফ গলেছে” । দিলীপ ঘোষ ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দিয়ে লিখেছেন,’আজ সাংসদ, বিধায়ক, প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে সল্টলেকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহের সাংগঠনিক বৈঠক। ২০২৬ নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচনেই বাংলার মানুষ জবাব দেবে। আমরা প্রতিটি বুথে আরও শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলব। আমাদের রাজ্যে রাষ্ট্রবাদী সরকার চাই। দেশবিরোধী, তোষণকারী, অনুপ্রবেশ সমর্থনকারী সরকারকে এবার বাংলার মানুষ বিদায় দেবে।’
অন্যদিকে অমিত শাহও একই ছবি পোস্ট করেছেন । যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে । তিনি তৃণমূলকে উৎখাত করতে “সর্বশক্তি দিয়ে” তার দলীয় কর্মীরা কাজ করবেন বলে বার্তা দিয়ে লিখেছেন,’আজ কলকাতায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ধর্মীয় পুনর্জাগরণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ আজ তৃণমূল কংগ্রেসের তোষণমূলক রাজনীতির ফলে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। এই বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যকে অনুপ্রবেশকারীমুক্ত করতে এবং বিজেপি সরকার গঠনের লক্ষ্যে দলের প্রতিটি কর্মী সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবে।’
অমিত শাহের এই বার্তাতেই স্পষ্ট যে এবারে হয়তো শুভেন্দু-দিলীপকে একই মঞ্চে দেখা যাবে । যা আসন্ন ভোটের আগে খুবই জরুরি ছিল । অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলির উপলব্ধির প্রকাশেই প্রমানিত হয়েছিল যে খোদ শুভেন্দু অধিকারীই দলের মধ্যে কোনো প্রকার বিভেদ থাকুক চাইছেন না । অভিজিৎ গাঙ্গুলি সম্প্রতি বলেছিলেন,’দিলীপবাবুর মধ্যে এখনো আগুন আছে । দলের জন্য তা কাজে লাগানো উচিত ।’ তিনি যে বিরোধী দলনেতার বাইরে গিয়ে এই প্রকার মন্তব্য করবেন না তা স্পষ্ট । তারপরে কলকাতায় অটল বিহারী বাজপায়ীর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত দলীয় অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর বার্তা ছিল,”আমি নই, আমরা সকলে মিলে অত্যাচারী মমতা ব্যানার্জির সরকারকে উৎখাত করব ।” সেই সাথে তিনি দলীয় কর্মীদের তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “একমাত্র মুখোমুখি সংলাপেই সব মিমাংসা হতে পারে ।” তার এই সমস্ত কথাবার্তা যে নিছক কথার কথা ছিল না তা আজ দিলীপ ঘোষের কলকাতায় কর্মী সম্মেলনে ডাক পাওয়াতেই স্পষ্ট । এখন দেখার বিষয় রাজ্য বিজেপির ত্রিশক্তি শুভেন্দু-শমীক-সুকান্তর সঙ্গে দিলীপ যুক্ত হয় কিনা । আর যদি হয় তা তৃণমূলের জন্য নতুন একটা সমস্যা খাড়া করতে পারে ।।
