দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৬ ফেব্রুয়ারী : ভবঘুরে ‘কান সাফাইকারী’র কাছে কান পরিষ্কার করতে গিয়ে শ্রবণশক্তি হারাতে বসেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার এক ব্যক্তি । কান সাফাইকারী যুবক সরু ধাতব তার দিয়ে ওই ব্যক্তির কানে এমন ভাবে খোঁচাখুঁচি করেছিল যে কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় । আর রক্তক্ষরণ চাপা দিতে পাইপ জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত “এম সিল” আঠা দিয়ে ব্যক্তির কানের ছিদ্র বুজিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় কান সাফাইকারী যুবক । অবশ্য তার আগে নিজের পারিশ্রমিক বাবদ ২০ টাকা পকেটস্থ করে সে । কাটোয়ার কোঁয়ারা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় গাড়িচালক তমাল প্রামানিক (৩০) নামে ওই ব্যক্তি বর্তমানে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে,তমাল প্রামানিকের একটি পিকআপ ভ্যান আছে ৷ সেটি তিনি ভাড়ায় খাটান । বুধবার দুপুরে তিনি ভাড়ার আশায় কাটোয়ার সিঙ্গির মোড়ে গাড়ি নিয়ে দাড়িয়েছিলেন । আর তখনই সেখানে কাঁধে একটা কাঠের বাক্স ঝুলিয়ে ‘কান সাফাইকারী’ ভবঘুরে যুবক সেখানে আসে । এদিকে গাড়ির ভাড়া হচ্ছে না দেখে ভবঘুরেকে দিয়ে নিজের দু’কান পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন তমালবাবু । ডানদিকের কান পরিষ্কার করানোর পর বাঁদিকের কান পরিষ্কার করার সময়েই ধাতব তারের খোঁচায় কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে যায় ।
তমালবাবু বলেন,’আমার ব্যাথা হচ্ছিল খুব । কিন্তু ওই যুবক আমায় আশ্বস্ত করে বলে ‘কানে প্রচুর ময়লা জমেছে,তা পরিষ্কার করতে গেলে একটু আধটু ব্যাথা হবে । একথা শুনে আমি চুপ করে যাই । সব শেষে ভবঘুরে ছেলেটি আমার বাম কানের ছিদ্রে পেস্ট জাতীয় কিছু গুঁজে দিয়ে বলে,’পনেরো মিনিট কানে হাত দেবেন না,আপনা আপনিই ওই পেস্ট খুলে পড়ে যাবে । তারপর সে আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে মেমারি রুটের একটি বাসে উঠে পড়ে ।’
জানা গেছে,ওই ঘটনার ঘন্টা দুয়েক পর থেকেই তমালবাবুর বাম কানে অসহ্য ব্যাথা শুরু হয় । সেই সঙ্গে মুখ ফুলে যায় । ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন । তারপর সন্ধ্যা নাগাদ তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাটোয়ার নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ভাস্করজ্যোতি বর্মণের কাছে চিকিৎসা করাতে আসেন । বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাস্কর জ্যোতিবাবু তাঁর সহযোগী চিকিৎসক অ্যানাসথেসিষ্ট পার্থ সাহাকে সঙ্গে নিয়ে ঘন্টা খানেকের চেষ্টায় তমালবাবুর কানের ছিদ্র থেকে জমে যাওয়া “এম সিল” আঠা বের করেন । তারপর তাঁর পরামর্শে তমালবাবুকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
চিকিৎসক ভাস্করজ্যোতিবাবু বলেন,’সরু ধাতব তার কান পরিষ্কার করার সময় ওই ব্যক্তির বাম কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল । আর রক্ত ক্ষরণ চাপা দিতেই কানের ছিদ্রে আঠা দিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হয় ।’ পাশাপাশি তিনি জানান,তমালবাবুর বাম কানের শ্রবণশক্তি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে ।।